ইরানে মসজিদ খুলে দেওয়া হয়েছে, শীঘ্রই খুলবে স্কুল ॥ বিশ্বে মৃত্যু ২ লাখ ৪৫ হাজার

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে বেশ কিছু অঞ্চলের মসজিদ ফের খুলে দিচ্ছে ইরান। এছাড়া, লকডাউন আরও শিথিল করে শীঘ্রই স্কুলও খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইরানী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। রবিবার ইরানের করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্সের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। অন্যদিকে ভারতে একদিনের ব্যবধানে আবারও সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। ইতালির কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ এ আরও ৪৭৪ জনের মৃত্যুর কথা জানালেও এ সংখ্যাতে এপ্রিলে হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ২৮২ জনও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে লা রিপাবলিকা।
ওয়ার্ল্ডোমিটরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৫ লাখ এক হাজার ৬৯১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই লাখ ৪৫ হাজার ৫০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১১ লাখ ২৮ হাজার ৫৫১ জন। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানান, ইরানে করোনা সংক্রমণের কম ঝুঁকিতে থাকা ১৩২ কাউন্টিতে সোমবার থেকেই মসজিদ খুলে দেয়া হবে। তবে, বর্তমান প্রেক্ষিতে জামাতে নামাজ আদায়ের চেয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই বেশি জরুরী। ঝুঁকি কম হওয়ায় আগামী ১৬ মে থেকে স্কুলগুলো খুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে টাস্কফোর্স। একমাস ক্লাস চলার পর আবার গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হবে। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ইরানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। এরই মধ্যেই সেখানে ৯ হাজার ৪২৪ জনের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৬ হাজার ২০৩ জন। গত কয়েক সপ্তাহে ইরানে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির হার অনেক কমেছে। ১০ মার্চের পর থেকে সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে শনিবার।
ব্রিটেনে আরও ৬২১ মৃত্যু ॥ এখনও প্রতিদিন কয়েক হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যায় আরও ৬২১ জন যোগ হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৮২ হাজার ২৬০ জন। মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৩১ জন। এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৫ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ৫৫৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্পেনে আরও ১৬৪ মৃত্যু ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা ১৮ মার্চের পর সর্বনিম্ন দৈনিক মৃত্যু। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করোনা এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫ হাজার ২৬৪ জন। শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৮৮৪। এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগী দুই লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৭ জন। অর্থাৎ দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয়ই কমছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত বেড়ে ৬৭৪৪৮ ॥ করোনায় আক্রান্ত ও সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখ ৬০ হাজার ৯৯৬ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ হাজার ৪৪৮ জনের বেশি মানুষ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নিউইয়র্ক। সেখানে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার ৩৬৮ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যেজন্য নিউইয়র্কে চলমান লকডাউন এখনই প্রত্যাহারের দাবিকে ‘অপরিণত’ বলে উল্লেখ করেছেন গবর্নর এ্যান্ড্রু কুমে। তিনি চোখ বন্ধ করে লকডাউন প্রত্যাহার করে ফেলার পক্ষপাতী নন। কুমো বলেছেন, কর্মহীন অবস্থায় মানুষকে কত সংগ্রাম করতে হচ্ছে তা তিনি অবগত আছেন তারপরও লকডাউন প্রত্যাহারের আগে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও জানতে হবে। নিউজার্সির গবর্নর ফিল মুরফিও বলেছেন, আমরা পরিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদেরকে হারিয়েছি। সে কারণে আমরা নতুন করে সবকিছু চালু করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করতে পারি না।
ব্রাজিলে আরও ৪২১ মৃত্যু ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯৭০ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭ হাজার এক শ’ এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ৭৬১ জন। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
জার্মানিতে আরও ৭৪ মৃত্যু ॥ করোনায় মৃত্যুর মিছিল থামেনি এখনও। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৭৪ জন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে সেখানে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮১২।
ভারতে একদিনে শনাক্ত ২৬৪৪ ॥ মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবারও সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড গড়ল ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার ৬৪৪ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৯৮০ জন। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনায় এক হাজার ৩০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৩ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন আরও ৬৮২ জন। দেশটিতে করোনামুক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮১৯ জন। এখনও চিকিৎসাধীন ২৮ হাজার ৪৬ জন। গত এক সপ্তাহে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন সাত শতাধিক।
সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ১৮২০৫ ॥ নতুন করে আরও ৬৫৭ জন প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ২০৫। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই অভিবাসী শ্রমিক। তারা বিভিন্ন ডরমিটরিতে থাকেন। দেশটির মাত্র ১০ জন নাগরিক বা স্থানীয় বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ॥ বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনায় রবিবার দিনের প্রথম প্রহরে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৩৩২ জন। মারা গেছেন ৩৮৭। এই সংখ্যা দিন শেষে আরও বাড়বে। আরও ২১ লাখ ২৮ হাজার ৯০ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে ৫০ হাজার ৭৩৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৮৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে মেক্সিকো। এরপর রয়েছে বেলজিয়াম। সেখানে ৭৯ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। রাশিয়া রয়েছে তৃতীয় স্থানে। দেশটিতে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে ৫৮ জন। চতুর্থ অবস্থানে থেকে ইরান ৪৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।