সারা দেশকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পুরো বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একইসঙ্গে সংক্রমিত এলাকার জনসাধারণকে তিনটি নির্দেশনাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এসব নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এই নির্দেশনাগুলো হলো- ১. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতীব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না; ২. এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলো; এবং ৩. সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করায় লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে ও লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করেছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। হাঁচি, কাশি ও পরস্পর মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটছে।
এদিকে বৃহস্পতিবারে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার যেন নতুন রেকর্ড গড়ছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ৩৪১ রোগী। এনিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬০ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৭২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুহার ৩ শতাংশ। করোনা সন্দেহে বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৪৬১ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৪৬৩ রোগী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হলো পরস্পর হতে পরস্পরকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা এবং যেহেতু, জনসাধারণের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় এবং যেহেতু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে।
সেহেতু সংক্রামক রােগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১নং আইন) এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হলো।
সংক্রমিত এলাকার জনসাধারণকে তিনটি নির্দেশনাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো হলো- ১. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতীব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না; ২. এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলো; এবং ৩. সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। এ আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিয়ে আইনের সংশ্লিষ্ট অন্য ধারাগুলো প্রয়োগ করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০ জন মারা গেছে। এই মারা যাওয়া দশজনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী একজন, ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী তিনজন এবং ২১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন একজন। আর তাদের মধ্যে ঢাকায় ছয়জন এবং ঢাকার বাইরে আছেন চারজন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর করোনা শনাক্তে টেস্ট করা হয়েছে ২ হাজার ১৯টি। গতকালের চেয়ে নমুনা সংগ্রহ ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৮৭টি। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৪৬৩ জন করোনা রোগী।
অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আইইডিসিআর ল্যাবে ৩৭৪টি, আইপিএইচ ১০৩টি, আইসিডিডিআর’বি ল্যাবে ১৪৯টি, চাইল্ড হেলখ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৮টি, বিএসএমএমইউ ল্যাবে ১৮৮টি, আইদেশী ল্যাবে ৬৭টি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৭৭টি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ল্যাবে ২৫১টি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজিতে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকার ভেতরে ১৪০৭টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকস এ্যান্ড ইনফরমেশন ডিজিজেস ল্যাবে ১০৯টি, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ১৮৮টি, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ৩৮টি, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ১৭টি, রংপুরে মেডিক্যাল কলেজে ৯২টি, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ৫৩টি, খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ৭৪টি এবং শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে ৪১টি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এভাবে ঢাকার বাইরে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৬১২টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ভেতরে ও বাইরে মোট পরীক্ষা করা হয় ২০১৯টি।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ৪৪৯৯ জন এবং হাসপাতাল ও অন্যান্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ৭১৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৩ হাজার ৭৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে এবং ছাড় পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৫০৫ জন। করোনা সন্দেহে বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৪৬১ জন।
করোনা সংক্রান্ত কলের বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরে ৫৭ হাজার ৬৯০টি, ৩৩৩ নম্বরে ৩৫ হাজার ৯০৭টি এবং আইইডিসিআরের নম্বরে ৩১৪৫টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কল এসেছে ৯৬ হাজার ৪৯২টি। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৬টি পিপিই এবং বিতরণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার ৪৬৪টি। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৩টি পিপিই। আর টেস্ট কিটস মজুদ রয়েছে ৭১ হাজার।