আওয়ামী লীগ নির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ জনস্বার্থ ও কল্যাণের স্বার্থে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে পরিবর্তন আনা হয়েছে

16
গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক জরুরী সভায় বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ পাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। তারপরও আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণই সবচেয়ে বড় কথা। আমাদের জন্য কষ্ট ও বেদনার হলেও জনস্বার্থ ও জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা চাই, কোথাও বড় ধরনের লোকসমাগম যাতে না হয়, জনগণ যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। এ জন্য মুজিববর্ষের জনসমাগম (প্যারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান) আপাতত বন্ধ রেখেছি। পরবর্তীতে সময়সূচী ঠিক করে আমরা তা পালন করব।
সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরী বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ঢাকার তিনটি হাসপাতাল ও জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণ সবচেয়ে বড়। আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করব, কিন্তু উদযাপনটা একটু ভিন্নভাবে হবে। লোকসমাগম যাতে কম হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে উদযাপন করব। আমরা চাই, কোনভাবে জনগণ যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। যেহেতু বিশ্বব্যাপী এটা ছড়িয়েছে, সেখানে দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়াটা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে ঘরের মধ্যে মাস্ক পরে থাকার দরকার নেই। শুধু যাদের সর্দি-কাশি হয়েছে তারা একটু সাবধান থাকবেন। তিনি বলেন, করোনা আতঙ্কে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে জমা করে রাখার দরকার নেই। পাগলামি করার দরকার নেই। সর্দি-কাশিতে কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। কাপড় কেটে ঘরের মধ্যই রুমাল তৈরি করা যেতে পারে। হ্যান্ডসেক (করমর্দন) করবেন না কেউ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন। তিনি বলেন, এই ভাইরাস (করোনা) বেশিদিন থাকে না, বেশিদিন টিকে থাকে না। তাই অত বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
স্বাস্থ্যবিধি ভালভাবে মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাইরাসে যুবক-তরুণদের তেমন ভয় নেই। যাদের কিডনি সমস্যা আছে, হার্টের সমস্যা আছে- এমন ব্যক্তিদের কিছুটা ভয় থাকে। আর বৃদ্ধদের তো ব্যাপার আলাদা। তবে এই ভাইরাস আতঙ্ক নিয়ে ঘরকুনো হয়ে থাকার যেমন দরকার নেই, তেমনি বেশি জনসমাগম এড়িয়ে চলাও ভাল। তবে সর্দি-কাশি হলে একটু সতর্ক থাকা উচিত। ঋতু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই আমাদের দেশে একটু সর্দি-কাশি বেশি হয়। এমনটা হলে বারবার হাত ভালভাবে ধুতে হবে, হাত যেন মুখে না লাগে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বারবার সচেতনতামূলক বুলেটিন প্রচার করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। ঢাকায় তিনটি হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে কয়েকটি বেড খালি রাখা হচ্ছে, যদি সেখান কোন রোগী পাওয়া যায় তার চিকিৎসা করতে। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে কয়েকটি দেশের জন্য বাংলাদেশে অন-এ্যারাইভাল ভিসা আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। এর আগেও আমাদের দেশে অনেক ভাইরাস এসেছে, আমরা তা মোকাবেলা করেছি।
মুজিববর্ষের সকল কর্মসূচী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেশকিছু কর্মসূচীতে পরিবর্তন এনেছি। ব্যাপক লোকসমাগম বা ব্যাপক গ্যাদারিং হবে সেসব কর্মসূচী আপাতত স্থগিত রেখেছি, পরবর্তীতে করা হবে। এই করোনাভাইরাসের সমস্যা শেষ হলে পরবর্তীতে এসব কর্মসূচী পালন করা হবে। কোনভাবেই যাতে কেউ সংক্রমিত বা আক্রান্ত না হয় সেজন্য কর্মসূচীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মুজিববর্ষের ব্যাপক কর্মসূচী পুনর্বিন্যস্ত করার এই সিদ্ধান্ত আমাদের পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের হলেও জনস্বার্থ ও জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করেছি। আমরা এ নিয়ে বৈঠক করেছি। বৈঠকে শেখ রেহানা, সায়মা হোসেন পুতুল, রেদওয়ান ববিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ছিল। সবাই মিলে আমরা মতামত দিয়েছি। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বলে দিয়েছি, আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণটাই সবচেয়ে বড়। সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেভাবে ব্যাপক লোকসমাগম হবে, বেশি গ্যাদারিং হবে, বেশি বেশি লোকসমাগম হবে- সেই কর্মসূচীগুলো আমরা আপাতত স্থগিত রেখেছি। আমরা পরিবর্তীতে তারিখ দেব। এগুলো ঠিক এই মুহূর্তে আমরা করব না। আমরা অন্তত এক সপ্তাহ দেখব। দেখার পরে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব। মুজিববর্ষ উদযাপন করব ভিন্নভাবে। এমনভাবে কর্মসূচী পালন করব যাতে মানুষ ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।
মুজিববর্ষ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বছরব্যাপী মুজিববর্ষের কর্মসূচী রয়েছে। উদ্বোধনী দিনে (বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ) লাখো মানুষের সমাগম হতো, মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনাও ছিল। কিন্তু জনকল্যাণের কথা চিন্তা করে তা স্থগিত করেছি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শিশু দিবসের কর্মসূচীও বন্ধ রাখতে বলেছি। আমাদের জন্য এটা খুব কষ্টকর হলেও জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আপাতত সীমিত আকারে আমরা কর্মসূচী পালন করব। পরে ব্যাপকভাবে পালন করা যাবে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান চলবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে থিম সঙ, প্রশিক্ষণ, স্যুভেনির তৈরি হয়েছে, তা বের করা হবে। অন্যান্য কর্মসূচীও অব্যাহত থাকবে। তবে সবকিছুর সময়সূচীই কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মুজিববর্ষের সরকারী কর্মসূচী ছাড়াও দলীয়ভাবে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন নিয়ে আলোচনা এবং বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতেও দলগতভাবে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।