আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ঢাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আর এদিন দুপুর বারোটা থেকে ভোট কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে নগরের ভেতরে ও প্রবেশ পথগুলোই বাড়তি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকা ছাড়াও ঢাকার অলিতে গলিতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ভোট কেন্দ্র ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থাকা সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করা হচ্ছে।
আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকেই মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য।
সরেজমিনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে অধীন কল্যাণপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রটিতে দেখা গেছে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গেটের সামনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ভেতরে আনসার সদস্যরা অবস্থান করছেন। আর র‌্যাব পুরো এলাকায় টহল দিচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এতে সন্তুষ্ট। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি বা নিরাপত্তার অজুহাতে কাউকে কোন রকম হয়রানি করছেন না। এমনকি সামান্য রিক্সাচালক বা অন্যান্য যানবাহন চালকদেরও না। কোন যানবাহনের ওপর সন্দেহ হলে তল্লাশি করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। রাস্তায় আবালবৃদ্ধবনিতা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ বাসার সামনে জটলা করে গল্প করছেন। রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানান। এমন চিত্র দেখা গেছে, মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া রিয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রটিতে। ভোট কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তারা চারদিকে নজর রাখছেন। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের আশপাশে কোন ধরনের সভা সমাবেশ বা লোক জমায়েত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তারা। সাধারণ মানুষও তা মেনে চলছেন। যে যার যার মতো কাজ করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে কোন ঝুঁকি নেই। নির্বাচন উপলক্ষে যে কোন ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা মহানগরের সব পুলিশ সদস্যকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে পুলিশকে যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকার ওপর বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে।
র‌্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বহিরাগতদের ঢাকা ছাড়ার আহ্বান জানান। তবে কেউ যদি নিতান্তই না যান, তবে তিনি যেন সংযত থাকেন। কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে ঢাকায় চলাফেরার সময় নিজের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার আহ্বান জানান। কাউন্সিলর নির্বাচনের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেয়ার কথা বলেন। কোন ছিনতাইকারী বা ম্যানহোলের ঢাকনা চোরকে ভোট না দেয়ার পরমার্শ দেন তিনি। আর নির্বাচনকালীন বা নির্বাচন পরবর্তীতে কেউ নাশকতা, অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাস, বোমাবাজি করার চেষ্টা করলে তাদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন র‌্যাব প্রধান।
তিনি আরও বলেন, অতীতে যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমাবাজি করে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের মানুষ চেনেন। ভোটের মাধ্যমে নিশ্চয়ই ঢাকাবাসী তার জবাব দেবেন। জরুরী প্রয়োজন, চিকিৎসা, চাকরির সাক্ষাতকার বা বিদেশযাত্রার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। র‌্যাব প্রয়োজনে তাদের সব ধরনের সহায়তা দিবে।
বিএনপির তরফ থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ করা হয়। এমন অভিযোগ ইতোমধ্যেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। রাজধানীতে অভিযান অব্যাহত থাকলেও বিনা কারণে কাউকে হয়রানি বা গ্রেফতার বা আটক করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এজন্য নগরবাসী সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর খুবই খুশি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই ঢাকায় ৬৫ প্লাটুন বিজিবি নামানো হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত থাকছে। বিজিবি, র‌্যাব ও নৌ-পুলিশ নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দুই সিটিতে দুই হাজার ৪৬৮ কেন্দ্র রয়েছে। পুলিশ ও এপিবিএন-এর সমন্বয়ে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩টি স্ট্রাইকিং টিম, র‌্যাবের ১২৯ টিম নিয়োজিত থাকছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবে। এছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্যতীত কোন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন বা প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকার সন্দেহভাজন মেস, বাসাবািড়, হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায জোরালো তল্লাশি অভিযান চালানো শুরু হয়েছে। তবে বিনা দোষে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম।