জকিগঞ্জ শহরে কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জোর দাবী

5

জেড.এম.শামসুল :
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় শত-কিলোমিটার দূরে দেশ বিভাগের সময়কার ঘোষিত জকিগঞ্জ শহর আজও পূর্ণ শহরের রূপ লাভ করেনি। ১৯৪৭ সালে গণ-ভোটের মাধ্যমে জকিগঞ্জ অঞ্চল তৎকালীন করিমগঞ্জ মহকুমা শহর থেকে জকিগঞ্জ প্রস্তাবিত মহকুমা হিসাবে জকিগঞ্জ শহর হিসাবে রূপ লাভ করে। ১৯৪৮ সালে জকিগঞ্জে একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জকিগঞ্জ শহরে মহকুমা পর্যায় সকল অফিস স্থাপন সহ স্থানীয় আবাসিক হাকিমের আদালত স্থাপিত করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় তথাকথিত পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরেও জকিগঞ্জকে পূর্ণ শহরে রূপান্তরিত করা হয়নি।
কিন্তু জকিগঞ্জবাসী ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৭৯ গণঅভ্যুত্থান, ৭০ সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় একচেটিয়য়া ভোট প্রদান করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম.এ.লতিফ বিজয়ী হয়েছিলেন। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে মরণ-পণ যুদ্ধ করে ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ শত্র“ করা হয়। ১৯৭৩ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম.এ.লতিফ বিপুল ভোটের ব্যবধানে ন্যাপের কুঁড়ে ঘরের প্রার্থী আবুল বাইছকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জকিগঞ্জবাসীর জনপ্রতিনিধি হিসাবে এম.এ.লতিফ জকিগঞ্জের সমূহ দাবী-দাওয়া নিয়ে জাতির জনক বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলাপ করেন, বঙ্গবন্ধু জকিগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে সর্বাধিক চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে জকিগঞ্জে একটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যা ১৯৭৬ সালে সরকারী বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাঙালির চির শত্র“ মীর জাফরের উত্তরসূরী কুখ্যাত মোস্তাকের ষড়যন্ত্রের শিকার হন। স্বাধীনতা বিরোধী সম্প্রাদায়িক শক্তির মদদে বাঙালি জাতির কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি শোষিত-বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত মানুষের পরীক্ষিত প্রিয়-মুখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারবর্গকে নির্মমভাবে হত্যা করে, দেশময় সামরিক আইন জারী করে। সকল প্রকার রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করে দেয়া হয়। মোস্তাকের অনুসারীসহ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। জকিগঞ্জের দাবী-দাওয়া বাস্তবায়নে ভাটা পড়ে যায়। ১৯৭৬-৭৭ সালে জকিগঞ্জের কৃতি সন্তান ডি.আই.জি এম.এ.হক (বাঘা হক) চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে জকিগঞ্জের দাবী-দাওয়া বাস্তবায়নে সমষ্টিগত ভাবে উদ্যোগ নেন। ১৯৮৬ সালে জকিগঞ্জ সরকারী কলেজ স্থাপিত হয়। বর্তমান সরকারের আমলে এক পর্যায় জকিগঞ্জ কলেজ ডিগ্রী করা হয়।
সীমান্তিক এলাকা হিসাবে জকিগঞ্জ অঞ্চল অনেক পিছিয়ে রয়েছে, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিতা অব্যাহত রাখতে জকিগঞ্জ শহরে একটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরী বলে জকিগঞ্জবাসীর একান্ত প্রত্যাশা। জকিগঞ্জে টেকনিক্যাল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে, বৃহত্তর জকিগঞ্জের বেকার, দক্ষ, অদক্ষ, শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুব সমাজকে জন-শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। জকিগঞ্জবাসীর প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হবে। জকিগঞ্জবাসী একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।
জকিগঞ্জবাসীর অন্যান্য দাবী-দাওয়ার মধ্যে জকিগঞ্জ শহরে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবিতে রূপ নিয়েছে। তাই বর্তমান সরকার উপজেলা ভিত্তিক টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জকিগঞ্জবাসীর পূর্ণ প্রত্যাশা বিভাগীয় শহর থেকে শত-কিলো মিটার দূরে অবস্থিত জকিগঞ্জ শহরে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করার দাবী জানিয়েছেন, সত্তর দশকের ছাত্র লীগ নেতা জকিগঞ্জ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ ফরিদ উদ্দিন, সত্তর দশকের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা, জকিগঞ্জ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, সাধারণ সম্পাদক, জেড.এম. শামসুল, জকিগঞ্জ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষ ফারুক আহমদ, জকিগঞ্জ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোঃ মোজ্জামিল আলী (আদই) প্রমুখ। জকিগঞ্জ সমিতির নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে অবিলম্বে জকিগঞ্জে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বর্তমান সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।