কানাইঘাটে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে তোলপাড়

68

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট রাজাগঞ্জ ইউপির লালারচক পশ্চিম গ্রামের দুবাই প্রবাসী ফখরুল আমিনের স্ত্রী এক সন্তানের জননী ফাহিমা বেগম (২৭) কীটনাশক পান করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় জনমনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসী স্বামী কর্তৃক খোঁজ খবর না নেওয়া ও দেবরের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ফাহিমা বেগমকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার ফাহিমা বেগম রাত সাড়ে ৭টার দিকে কীটনাশক পান করলে তাকে আশংকা জনক অবস্থায় সিওমেক হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থা ফাহিমা বেগম গত বুধবার সকালে মারা যান। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের লাশের ময়না তদন্তের পর কানাইঘাট থানায় এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। ফাহিমা বেগমের ভাই জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে লালারচক গ্রামের দুবাই প্রবাসী ফখরুল আমিনের সাথে তার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর স্বামী ফখরুল আমিন দুবাইতে চলে যান। এরপর আর সে বাড়ীতে আসেনি। ফাহিমা বেগম ও তার স্বজনরা জানতে পারেন সকলের অগোচরে ফখরুল ইসলাম দুবাইতে এক বাংলাদেশী মেয়েকে বিয়ে করে সেখানে ঘর সংসার করছেন। বিয়ের পর থেকে ফাহিমা বেগমের কোন খোঁজ খবর স্বামী নেননি। ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে ফাহিমা বেগমের। এমতাবস্থায় স্বামীর সংসারে থাকার পর তার উপর দেবর আল-আমিনের কু-নজর পড়ে। দেবর আল-আমিন বিভিন্ন সময়ে ফাহিমা বেগমকে কু-প্রস্তাব দিত বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। যৌতুকের জন্য ফাহিমা বেগমের শ^াশুড়ী সালমা খাতুন ও ননরী সুমি বেগম কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় ২০১০ সালে ফাহিমা বেগম বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছিলেন। দেবর আল-আমিনের কু-প্রস্তাবে অতিষ্ট হয়ে অনুমান ৩ মাস পূর্বে ফাহিমা বেগম তার কন্যা সন্তান রুজি বেগমকে নিয়ে নিজ পিত্রালয় ফতেহগঞ্জ গ্রামে চলে আসেন। একপর্যায়ে ফাহিমা বেগমের কাছ থেকে দেবর আল-আমিন ও শ^াশুড়ী সালমা খাতুন তার মেয়ে রুজি বেগমকে জোরপূর্বক ভাবে নিয়ে গেলে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন ফাহিমা বেগম। গত রবিবার ফাহিমা বেগম তার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলার জন্য বার বার ফোন করার পর শ^শুর বাড়ীর লোকজন মেয়ের সাথে কোন ধরনের কথা বলতে না দেওয়ায় ক্ষোভ ও অপমানে গত সোমবার সবার অগোচরে পিত্রালয়ে কীটনাশক পান করে ফাহিমা বেগম বলে তার ভাই জসীম উদ্দিন জানান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মারা যান ফাহিমা বেগম। ফাহিমা বেগমের ভাই জসীম উদ্দিনের অভিযোগ তার বোনকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে তার স্বামী প্রবাসী ফখরুল আমিন, দেবর আল-আমিন, তাজুল-আমিন, শ^াশুড়ী সালমা খাতুন ও ননরি সুমি বেগম। তার বোনের বিয়ে হওয়ার পর থেকে বোন জামাই ফখরুল আমিন কোন খোঁজ খবর না নিয়ে দুবাইতে বিয়ে করে সেখানে সংসার করতেছে। অপরদিকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার দেবর আল-আমিন আমার বোন ফাহিমা বেগমকে নানা ভাবে কু-প্রস্তাব দিত, তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। তার বোনকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, এ ঘটনায় তিনি আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুনু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফাহিমা বেগম তার পিত্রালয়ে গত সোমবার কীটনাশক পান করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মারা গেছেন। এব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে তার আত্মহত্যার প্ররোচনায় স্বামীর বাড়ীর লোকজন জড়িত থাকলে তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।