‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ, আতঙ্কের কিছু নেই

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনে শনাক্ত হওয়া রহস্যাবৃত ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। চীন থেকে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা করার জন্য বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। বিভিন্ন তথ্য সংবলিত ফর্ম বিতরণসহ ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ এর উপসর্গ উল্লেখ করে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তিদেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হননি এবং আতঙ্কের কিছুই নেই বলে আশ্বস্ত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এই নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার রাতে জেনেভায় জরুরী বৈঠকে বসে। ভাইরাসটির বিষয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আইইডিসিআর’র জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এএসএম আলমগীর জানান, চীনের নতুন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে। প্রাণী থেকে ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও কোন প্রাণী থেকে সংক্রমিত হয়েছে তা এখনও অজানা রয়ে গেছে। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণের বিষয়টিও প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। ভাইরাসটিতে সংক্রমণের লক্ষণ হচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, জ্বর, কাশি, ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়া ও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হননি এবং আতঙ্কের কিছুই নেই।
নোবেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ডাঃ এএসএম আলমগীর বলেন, চীনে শনাক্ত হওয়া রহস্যে আবৃত ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। চীন থেকে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা করার জন্য বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। বিভিন্ন তথ্য সংবলিত ফর্ম বিতরণসহ ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ এর উপসর্গ উল্লেখ করে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে জানান ডাঃ এএসএম আলমগীর।
এ বিষয়ে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিগত সময়ে বিভিন্ন শক্তিশালী ভাইরাস মোকাবেলায় সফলতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নেই। নতুন নতুন ভাইরাস শনাক্তকরণ এবং সেগুলো মোকাবেলা কার্যক্রম বছরজুড়েই চলে। প্রশিক্ষিত জনবলও রয়েছে। শুধু ভাইরাসের ধরন বুঝে জনবল ও চিকিৎসা উপকরণসমূহকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী কাজে লাগাতে হয়। নোবেল করোনা ভাইরাসের বিষয়েও সতর্কতামূলক নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত ফ্লাইটে যাত্রী যাতায়াত হয়। এ কারণে বিমানবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
নোবেল করোনা ভাইরাস কী
‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ এর অনেক কিছুই এখনও অজানা রয়ে গেছে। চীনে শনাক্ত হওয়া নতুন রোগ ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে। সম্প্রতি চীনের হোবে প্রদেশের হুওয়ান শহরে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত (নিউমোনিয়া) এ রোগটি প্রথম চিহ্নিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা জারি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১০ জানুয়ারি চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য নতুন এ রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে অন্তর্র্বতীকালীন গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। গাইডলাইনে কীভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে, নমুনা পরীক্ষা করা, রোগীর চিকিৎসা, স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে সংক্রমণ প্রতিরোধ, চিকিৎসাসামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা ও নতুন এ ভাইরাসটি সম্পর্কে জনসচেতনতার ওপর গুরত্বারোপ করা হয়েছে। নতুন ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্ক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘অরক্ষিত’ অবস্থায় প্রাণীদের সরাসরি সংস্পর্শে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে। আর মাংস ও ডিম ভালভাবে রান্না করে খেতে বলেছে। পাশাপাশি ঠা-া বা জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির খুব কাছাকাছি না যেতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভাইরাসটিতে সংক্রমণের লক্ষণ হচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, জ্বর, কাশি, ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়া ও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ভাইরাসটি বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান জানান, সম্প্রতি চীনের হুওয়ান শহরে দেখা দেয়া নতুন ধরনের ভাইরাসজনিত ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ এর সংক্রমণ রোধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এই রোগ এখন শুধু চীনের এক প্রদেশে নয়, বহু প্রদেশে এবং চীন ছাড়া কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ ভাইরাস পশু থেকে ছড়াচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এটা বাজার থেকে ছড়িয়েছে। সেখানে সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হতো। এছাড়া ওই বাজারে বিড়াল, কুকুর, সাপ বিক্রি হচ্ছিল। তিনি বলেন, চীন ও হংকং থেকে ফ্লাইটযোগে নিয়মিত যাত্রী আসা যাওয়া করায় এ রোগে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তাই এখন থেকেই চীন ও হংকংয়ের ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্য কার্ড সরবরাহ করার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যাসহ নতুন এ রোগের উপসর্গ রয়েছে কি না, তা যাত্রীদের কাছ থেকে জানার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের চিকিৎসকদের নতুন এ রোগটি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মাঝেও এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, এই রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং শ্বাস কষ্ট হওয়া। ১৪ দিনের মধ্যে যাত্রীদের এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, এই রোগ সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু জানা নেই। চিকিৎসক, আইসিইউতে যারা আছেন, তাদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান।