সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬১ জন

36

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে অনুষ্ঠিত সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাত হাজার ১৬১ জন প্রার্থী। বুধবার লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শীঘ্রই মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এদিকে আগামী সপ্তাহেই প্রকাশ হচ্ছে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। এ বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ হবে দুই হাজার ১৩৫ জনকে।
গত ছয় সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। পিএসসির অধীনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এক হাজার ৯৯৯ পদের জন্য চাকরি প্রার্থী ছিলেন দুই লাখ ৩৫ হাজার ২৯৩ জন। কমিশনের চেয়ারম্যান দ্রুত সময়ে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারী হাইস্কুলে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগে এ ধরনের পরীক্ষা এবারই প্রথম নিলো পিএসসি। অন্য পরীক্ষার মতো এটাও স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা করতে পারছি। দ্রুত সময়ে এ শিক্ষক নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া শেষ হবে। শিক্ষার জন্য যেটা হবে একটি যুগান্তকারী কাজ। চেয়ারম্যান জানান, যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন এখন আমরা তাদের চূড়ান্ত বা মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকব।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষক সঙ্কটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার রাজধানীসহ কোন কোন এলাকায় কিছু প্রতিষ্ঠানে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও মফস্বলের স্কুলগুলোতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। অন্যদিকে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকের কোন পদই নেই। ফলে মানসম্মত শিক্ষা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) দেয়া তথ্যানুযায়ী, সদ্য জাতীয়করণসহ সারাদেশে ৩৪৭ সরকারী হাইস্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে ১০৯ প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ৪৭১ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের মধ্যে ৪৬৩ পদ শূন্য। ১০ হাজার ৩৪৪ সহকারী শিক্ষক পদের মধ্যে এক হাজার ৬০০ পদ শূন্য। শূন্য পদে ৩৬তম বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে ১৭৮ জনকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করছে পিএসসি। বাকি পদে সরাসরি নিয়োগ দেবে পিএসসি।
২০১২ সাল থেকে কারিকুলাম ও সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, চারু ও কারুকলা- নতুন এ চারটি বিষয় চালু করা হয়েছে। নতুন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে এক বিষয়ের শিক্ষককে পাঠদান করতে হচ্ছে অন্য বিষয়ে।
এছাড়া গত কয়েক বছরে অনেক শিক্ষক মারা গেছেন অথবা অবসরে যাওয়ায় পদ শূন্য হয়েছে। শিক্ষক সঙ্কটে সরকারী হাইস্কুলে পড়াশোনার মান কমছে। ক্লাসে ঠিকমতো পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হচ্ছে।
অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে সরকারী হাইস্কুল থাকলেও তারা নিরূপায় হয়ে সন্তানকে বেসরকারী স্কুলে ভর্তি করেন। এর নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক সঙ্কট।
এদিকে পিএসসির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আগামী সপ্তাহেই প্রকাশ হচ্ছে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। এ বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ হবে দুই হাজার ১৩৫ জনকে।
পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য জনপ্রাসন মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসি আগেই নির্দেশনা পেয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চাহিদাপত্রও হাতে পেয়েছে কমিশন। এই বিসিএসে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারের ৯১৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষার পরে বেশি নিয়োগ হবে প্রশাসন ক্যাডারে। প্রশাসনে ৩২৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। পুলিশে ১০০, বিসিএস স্বাস্থ্যতে সহকারী সার্জন ১১০ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন ৩০ জনকে নেয়া হবে।
পররাষ্ট্রে ২৫ জন, আনসারে ২৩ জন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী মহাহিসাবরক্ষক (নিরীক্ষা ও হিসাব) ২৫ জন, সহকারী কর কমিশনার (কর) ৬০ জন, সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) ২৩ জন ও সহকারী নিবন্ধক ৮ জন নেয়া হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১২ জন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ৪ জন, সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট ১ জন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ১ জন, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০ জন, সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) তিন জন নেয়া হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক বা তথ্য কর্মকর্তা বা গবেষণা কর্মকর্তা ২২ জন, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) ১১ জন, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক ৫ জন, সহকারী বেতার প্রকৌশলী ৯ জন, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে সহকারী প্রকৌশলী ৩৬ জন, সহকারী বন সংরক্ষক ২০ জন।
সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল পদে ২ জন, বিসিএস মৎস্যতে ১৫ জন, পশুসম্পদে ৭৬ জন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৩ জন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৬ জন, বিসিএস বাণিজ্যে সহকারী নিয়ন্ত্রক ৪ জন।
এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৪ জন, বিসিএস খাদ্যে সহকারী খাদ্যনিয়ন্ত্রক ৬ জন ও সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী ২ জন, বিসিএস গণপূর্তে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৩৬ জন ও সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) ১৫ জনসহ মোট দুই হাজার ১৩৫ জন কর্মকর্তাকে এই বিসিএসে নিয়োগ করা হবে।