ব্যাটারিচালিত যানবাহনে বিদ্যুৎ দেবে সরকার

26

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্যাটারিচালিত যানবাহন চার্জে পৃথক দামে বিদ্যুৎ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা হচ্ছে এখন অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যাচ্ছে এই সঙ্কট দূর করতে ব্যাটারিচালিত যানে কম দরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে।
বলা হচ্ছে দেশে ২০ লাখের ওপরে ব্যাটারিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর সবই থ্রি হুইলার অটোরিক্সা। দেশের বড় শহরগুলোর পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামেও ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এর বাইরে রিক্সা এবং ভ্যানে স্থানীয়ভাবে ব্যাটারি সংযোজন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কত ব্যাটারি রোজ চার্জ দেয়া হচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই।
সঙ্কটের কারণে বছর কয়েক আগে ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে এসব যানবাহন আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। যদিও সরকারের এই প্রক্রিয়াতে এসব ত্রি-চক্র যানের বিস্তার থামেনি বরং কয়েকগুণ বেশি হয়েছে।
গ্রামীণ জনপদে এই ধরনের যানবাহন সহজ যোগাযোগের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। ফলে এখন এই যানবাহন বন্ধ করে দেয়ার বদলে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যানবাহনগুলো কি প্রক্রিয়াতে বিদ্যুত দিয়ে চার্জ করা যেতে পারে সে বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তা করা হচ্ছে। শুরুতে সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যটারিচালিত এসব যানজট চার্জ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য গ্রামীণ এলাকাতে রয়েছে এমন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। যাতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ না নিয়ে এসব থ্রি হুইলার চার্জ হতে পারে এজন্যই এই বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এসে সেই সিদ্ধান্ত বদলে গ্রিড থেকে বিদ্যুত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। তাও আবার কম দামে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, এখন পিক এবং অফপিক দুই সময়েই চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুত উৎপাদন হয়। কিন্তু অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা একেবারেই কমে যায়। তখন বেশিরভাগ বিদ্যুত কেন্দ্রই বন্ধ রাখতে হয়। বিকল্প হিসেবে এই বিদ্যুতের ব্যবহার তৈরি করা গেলে কেন্দ্রগুলো চালানো যেত।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চিন্তা করছি অফপিক আওয়ারে যখন চাহিদা থাকবে না তখন যেন এখান থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যাটারিচালিত যান চার্জ দেয়। পিক আওয়ারে চাহিদা বেশি থাকে তখন এখান থেকে বিদ্যুৎ নিলে চাপ বেশি পড়ে। এজন্য কিভাবে পৃথক একটি বিক্রয় শ্রেণী নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্যই সেই দামটি হবে বাণিজ্যিক বিদ্যুতের তুলনায় কম। এরপর দামের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিদ্যুত বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে এ বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ওই কার্যপত্রে হ্রাসকৃত মূল্যে বিদ্যুত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বলা হয় অফপিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধিতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মেগাওয়াট। আর এর বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট। অফপিক আওয়ারে চাহিদা আট থেকে নয় হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারছে না।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা কে বিদ্যুতের অফপিক আওয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সধারণত থ্রি হুইলারগুলো রাতেই চার্জ দেয়া হয়। একটি থ্রি হুইলার ১২ ঘণ্টা চার্জ দিলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা চলতে পারে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দান নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনে শ্রেণী নির্ধারণ করে। এবার ব্যটারিচালিত থ্রি গাড়ির জন্য পৃথক শ্রেণী নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।