জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি হউক

17

১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে জনপ্রতি সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদের নতুন সরকার কর্মী পাঠানোর অনলাইন পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়। এক বছর বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আবার একমত হয়েছে উভয় দেশ। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি মাসেই মালয়েশিয়ার একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধিদলটি ঢাকা সফরে আসার পর সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর পরই খুলতে পারে বন্ধ থাকা বাংলাদেশের শ্রমবাজার। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানো, উভয় দেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সম্পৃক্ততার পরিধি, মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং কর্মীর সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা, ডাটা শেয়ারিং ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলছে—এই সুসংবাদ ঘোষিত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোন পদ্ধতিতে সেখানে জনশক্তি রপ্তানি করা হবে।
বাংলাদেশ থেকে ‘জিটুজি’ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করা হতো। মালয়েশিয়ায় শুধু নয়, যেকোনো দেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে জিটুজি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নিরাপদ, অভিবাসীবান্ধব এবং অত্যন্ত স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ের। মালয়েশিয়ায় এই ব্যয় তখন ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ ডলার। সেই সময়ের নিয়মানুযায়ী মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা কুয়ালালামপুরে ডাটা ব্যাংকে প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের চাহিদাপত্র জমা দিত। প্রয়োজনীয় যাচাইয়ের পর মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকদের বাছাই করে কুয়ালালামপুরে হাইকমিশনের মাধ্যমে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে তালিকাটি পাঠিয়ে দিত। মেডিক্যাল ফিটনেস, ভিসা, বিমান টিকিট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত কর্মীদের কুয়ালালামপুরে পাঠিয়ে দিত। বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তারা কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগেই প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী কর্মীদের গ্রহণ করত। পরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগকর্তাদের তাদের কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ আনুষ্ঠানিকতা যেমন মেডিক্যাল চেকআপ, ওয়ার্ক পারমিট, বীমা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে হতো। সহজ কর্মীবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী একটি প্রক্রিয়া হওয়া সত্ত্বেও দুই পক্ষের অবহেলা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে আর টিকে থাকতে পারেনি।
মালয়েশিয়ার যে শ্রমবাজার খুলতে যাচ্ছে, তা যেন আবার নতুন করে স্বার্থান্বেষী মহলের খপ্পরে না পড়ে—এ ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে হবে। জিটুজি প্রক্রিয়ায় সেখানে জনশক্তি পাঠানো হোক।