সাকিবের নিষেধাজ্ঞা বিস্ময় দূর হচ্ছে না !

21

স্পোর্টস যেস্ক :
সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখনও বিস্ময় যেন দূর হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন চলছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি উঠছে। আবার ভারত সফরের আগেই কেন নিষিদ্ধ হলেন সাকিব? এমন প্রশ্নও উঠছে। দাবি-দাওয়া নিয়ে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়াতেই কি এখন এমন শাস্তি ভোগ করতে হলো সাকিবকে? এমন জল্পনাও সবখানে। কিন্তু আসল খবর বেরিয়ে পড়েছে। এমন সময়, ভারত সফরের আগে সাকিব নিজেই নাকি আইসিসির কাছে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন। দলের স্বার্থেই সাকিব এমনটি করেছেন। যেন ভারত সফরের মাঝে নিষেধাজ্ঞা আসলে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।
গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, বিসিবির পরিচালক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আগেও বলেছি যে, এ বিষয়ে আমরা (বিসিবি) কিছুই জানতাম না। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, কেন ভারত সিরিজের আগেই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলো।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘আইসিসি যদি তাদের সময়মতো ঘোষণা দিত, তবে সেটা ভারত সিরিজের মাঝামাঝি সময়ে আসত। যা দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলত। কিন্তু সাকিব তা চায়নি। সে বলেছিল, যদি শাস্তির ঘোষণা আরও পরে আসে তবে তার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা হবে না। তাই সে এখন নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে। এর ফলে বিশ্বকাপে তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও থাকবে। কারণ আগামী বছরের ২৯ অক্টোবর তার নিষেধাজ্ঞার শেষ হবে।’
জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের কাছ থেকে তিনবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে দুইবার এবং একই বছর আইপিএলে একবার। কিন্তু সাকিব বিষয়টিকে পাত্তা দেননি। তিনি মনে করেছেন, এতে পাত্তা দেয়ার কি আছে। আর এখানেই মস্তবড় ভুল করে ফেলেন সাকিব। আইসিসির এ্যান্টি করাপশন এ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের কাছে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখেন। যা আইসিসির এই ইউনিটের কাছে গুরুতর অপরাধ। সেই অপরাধে অপরাধী হন সাকিব। তাতে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা আসে। এর মধ্যে এ নিয়ে এ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে ভালভাবে সহযোগিতা করায় সাকিবকে এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২৯ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। আগামী বছর এই তারিখ পর্যন্ত যা টিকে থাকবে। পরের বছর নিষিদ্ধ হওয়া থেকে বেঁচে যান সাকিব। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় দ্বিতীয় বছরের শাস্তি স্থগিত করা হয়। নিষিদ্ধ থাকা এক বছরে নজরদারিতে থাকবেন সাকিব। যদি আইসিসি সাকিবের আচরণে সন্তুষ্ট থাকে তাহলে দ্বিতীয় বছর থেকেই ক্রিকেটে ফিরবেন সাকিব। সেই হিসেবে ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে সাকিব ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন।
টি২০ বিশ্বকাপ ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর শুরু হবে। শেষ হবে ১৫ নবেম্বর। বাংলাদেশকে শুরুতে প্রথম রাউন্ড খেলতে হবে। এই রাউন্ড ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে। এরপর ২৪ অক্টোবর মূলপর্ব শুরু হবে। বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করলে মূলপর্বে খেলবে। বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ডে গ্রুপপর্বের (বি গ্রুপ) সেরা দল হয়, তাহলে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মূলপর্বের দুটি ম্যাচ খেলতে পারবেন না। তবে পরের তিনটি ম্যাচ খেলতে পারবেন। আর যদি সেমিফাইনাল, ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হয় তাহলে আরও দুই ম্যাচ বাড়বে। আর প্রথম রাউন্ডে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় সেরা দল হলে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মূল পর্বের দুটি ম্যাচ খেলতে পারবেন না। তিনটি ম্যাচ খেলতে পারবেন। সেমিফাইনাল, ফাইনাল উঠলে আরও দুই ম্যাচ বাড়বে। যদিও দল ঘোষণার সময় সাকিবকে রাখা যাবে না। কারণ দল ঘোষণা অনেক আগেই করে ফেলতে হয়। এক মাস আগে করতে হবে। তবে যখন থেকে সাকিব খেলতে পারবেন, তখন দলে সাকিবকে যুক্ত করা যাবে। তার মানে সাকিবের টি২০ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ আছে। আর তাই সাকিব টি২০ বিশ্বকাপের হিসেব এবং ভারত সফরের মাঝখানে নিষেধাজ্ঞা আসলে যেন দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে তাই নিজেই এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন। আইসিসিও তাই করেছে।
সাকিবকে নিষিদ্ধ করা হয় ২৯ অক্টোবর। সেইদিনই সাকিবভক্তদের মাঝে তুমুল উত্তেজনা দেখা যায়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে রাতেই জড়ো হয়ে সাকিবের সমর্থনে বিক্ষোভ করতে থাকেন সাকিবভক্তরা। ‘নো সাকিব, নো ক্রিকেট’ শ্লোগানে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। সাকিবকে শাস্তি দেয়া নিয়ে গণমাধ্যমে আইসিসি মেইলও দেয়। সেখানে সাকিবের বিরুদ্ধে যে তিন অভিযোগ আনা হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে, তা জানানো হয়। আইসিসি জানায়, ২.৪.৪ ধারা, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজ ও ২০১৮ সালে আইপিএলের সময় জুয়াড়িদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতিদমন ইউনিটের (এসিইউ) কাছে জানাননি সাকিব। ২.৪.৪ ধারা, ২০১৮ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজেই তার সঙ্গে জুয়াড়িরা দ্বিতীয়বার যোগাযোগ করলেও সেটি দ্বিতীয়বার আইসিসির দুর্নীতিদমন ইউনিটের কাছে বিস্তারিত জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব। ২.৪.৪ ধারা, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচের আগে সাকিবকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সেটিও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এক বছর ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। এই সময়ে তার দিকে নজর রাখবে আইসিসি। দ্বিতীয় বছর শাস্তি স্থগিত রাখা হয়েছে। সন্তুষ্টজনক আচরণ মেলার শর্তে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের পর ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন সাকিব। যখন আইসিসি এমন ঘোষণা দেয় তখন থেকেই তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করে। হঠাৎ করে সাকিবের নিষিদ্ধের খবরে সারাদেশ উত্তাল হয়। অবাক হয় বিশ্ব। অসংখ্য ক্রিকেটানুরাগীর মনে ছুঁয়ে গেছে কষ্টের ছোপ। কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি সাকিবকে এক বছর আর মাঠে দেখা যাবে না।
নিজ জেলা মাগুরার ক্রিকেটপ্রেমীরা সাকিবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটপ্রেমীরাও বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়ার খবর। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান নেটিজেনরা। নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে সাকিবের পাশে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই। শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতা, খেলোযাড়, মিডিয়াকর্মী থেকে শুরু করে সবাই সাকিবের প্রতি সমবেদনা জানান। আগামী দিনে শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার সাহস যোগান সাকিবভক্তরা। সাকিবের এমন নিষেধাজ্ঞায় ভেঙ্গে পড়েছেন জাতীয় দলের সতীর্থরাও। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল থেকে শুরু করে সবাই নিজেদের ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ফেসবুকে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা লিখেন, ‘তার (সাকিব) নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান…!!! সবার একটাই কথা, সাকিবকে যেমন ভালবাসেন, তেমনই ভালবাসবেন। সাকিব যেন আরও দুর্দান্তভাবে ফিরেন, সেই প্রত্যাশাই সবার। তবে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে জল ঘোলা হচ্ছে, তা যেন খোলাসা হয়ে গেল। সাকিব নিজেই দলের স্বার্থে এমন সময় ভারত সফরের আগে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন।