তাহিরপুর সীমান্তে বাড়ছে চোরাচালান

25

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
সীমান্তে দিন দিন বাড়ছে চোরাচালান। মদ, গাঁজা, ইয়াবা, কয়লা, চুনাপাথর, ঘোড়া, গরু, বাঁশ, বিড়ি সহ অসংখ্য দ্রব্য সীমান্তে বিজিবির চোখ এড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে। মাঝে মধ্যে সীমান্তে ছোট কাটো চালান বিজিবি আটক করলেও বড় চালানগুলো রহস্য জনক কারণে ধরা পড়ছে না।
সম্প্রতি ১৮ অক্টোবর সীমান্ত অতিক্রিম করে ৩৯টি ভারতীয় গরু নিয়ে টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ি দেয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গরু গুলো আটক করে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তাছাড়া মাঝে মধ্যে থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও ভারতীয় মদ, গাঁজা, ইয়াবা, বিড়ি সহ চোরাকারবারীদের আটক করছে, এতেও থামছে না চোরাচালান।
উপজেলায় সীমান্ত সড়ক রয়েছে ২০ কিলোমিটার। আর ২০ কিলামিটার সীমান্তে পূর্ব দিকে বাদাঘাট ইউনিয়নের মোকসেদপুর হতে পশ্চিম দিকে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বীরেন্দ্র নগর পর্যন্ত সড়কে রয়েছে একাধিক চোরাচালান পয়েন্ট। এর মধ্যে বাদাঘাট ইউনিয়নের মনার পাহাড়, উত্তর মোকসেদপুর, দক্ষিণ মোকসেদপুর, লাউড়ের গড়, উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বারেক টিলা, চানপুর, রাজাই, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বড়ছড়া, লাকমাছড়া, লালঘাট, জঙ্গলবাড়ি অন্যতম। আর এসব পয়েন্ট দিয়ে গত এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন বিওপির সীমান্তরক্ষা বাহিনী টহলরত অবস্থায় ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য আটক করে। তবু থামছে না চোরাচালান কারবারীদের ব্যবসা।
সূত্র জানায়, ৩ অক্টোবর বালিয়াঘাট বিওপির সদস্যরা শ্রীপুর ইউনিয়নের মদনপুর এলাকা থেকে ২ টন ভারতীয় কলয়লা আটক করে। একই দিনে চারাগাঁও বিওপি সদস্যরা লালঘাট আমির আলীর বাড়ি থেকে ১ কেজি গাঁজা আটক করে। ৪ অক্টোবর বারকেটিলা থেকে ৬ বোতল ভারতীয় মদ এবং ৫ অক্টোবর একই জায়গা থেকে ১৯ পিস ইয়াবা উদ্বার করে চানপুর বিওপি সদস্যরা। ৬ অক্টোবর শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে জঙ্গলবাড়ি থেকে ১ কেজি গাঁজা, রঙ্গাছড়া থেকে ১ টন কয়লা আটক করে বীরেন্দ্র নগর বিওপি সদস্যরা। ৯ অক্টোবর চানপুর এলাকায় ৪৮ বোতল ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ আটক করে চানপুর বিওপি সদস্যরা। ১৪ অক্টোবর দক্ষিণ লাউড়ের গড় এলাকা থেকে ৯৬ বোতল মদ ও ১৫ অক্টোবর দক্ষিণ মোকসেদপুরে ৪ কেজি গাঁজা, একটি মোটরসাইকেল আটক করে লাউড়ের গড় বিওপি সদস্যরা। ১৮ অক্টোবর সীমান্তে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ো হাওর পথ ধরে ৩৯টি গরু পাচারকালে গরু গুলো আটক করে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। স্থানীয়দের অভিযোগ সীমান্তে ছোট কাট চালানগুলো বিজির হাতে ধরা পড়ে। ধরা পরার সময় চোরাচালানীরা অধরাই থেকে যায়। যে কারণে চোরাচালান বন্ধ হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্তে জনৈক এক ব্যক্তি জানান, এখানকার চোরাচালানীরা পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারত গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে কম দামে গরু কিনে তাহিরপুর সীমান্তে ভারত অংশে নিয়ে আসে। সেখানে চুক্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়োগ দেয় চোরাকারবারীরা। তারপর সময় সুযোগ বুঝে গরু গুলো ভারতের সীমানা কাটা তার পার করে দেয় বাংলাদেশ অংশে। কখনো দু’একটি ধরা পরে আর অধিকাংশ বড় চালানগুলোই গুলোই অধরা থেকে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যাকেরঘাট বিওিপির কোম্পনি কমান্ডার আব্দুর রাশেদ বলেন,আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন গত মাস থেকে এ মাসে সীমান্তে কিছুটা চোরাচালান কমে এসছে। টাঙ্গুয়া হাওরে ৩৯ টি গরুর চালান আটক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটি আমার কোম্পানী এলাকা নয় তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। গরু গুলো তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আটক করেছেন বলেও তিনি জানান।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির হাসান বলেন, সীমান্ত অতিক্রম করে যখন ভারতীয় চোরাই গরু গুলো টাঙ্গুয়া হাওরের উপর দিয়ে নৌকাযোগে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গরু গুলো আটক করি।