মাদক সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ করুন

3

১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ইয়াবার নামই ছিল না। অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাচার, বিক্রয় ও ভোক্তাদের শাস্তির দিকটিও ছিল দুর্বল। আইনের ফাঁকফোকরও ছিল অনেক বেশি। এসব কারণে মাদক মামলার আসামিরা সহজেই পার পেয়ে যেত। ফলে দেশে মাদকের বিস্তার দ্রুততর হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ পাস করা হয় এবং একই বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে তা কার্যকর করা হয়। নতুন আইনে মাদক পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্থলগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এতে মামলাজট কমাতে জেলাপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি। এমনকি প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা জজ বা দায়রা জজকে মাদক মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। ফলে মাদকসংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ কার্যত বন্ধ রয়েছে। এ কারণে উচ্চ আদালত থেকে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ১০৩ জনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো গ্রেপ্তার করেছিল। তার পরও অনেককে গ্রেপ্তার ও মামলা করা হয়েছে। গত বছর মে-জুন মাসে মাদকবিরোধী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, সে সময়ই ২০ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। নতুন আইনেও কয়েক হাজার মামলা হয়েছে। নতুন আইনের ৫১ ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরিত হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়ায় কিংবা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জেলা জজ বা দায়রা জজকে ট্রাইব্যুনাল পরিচালনার দায়িত্ব না দেওয়ায় উচ্চ আদালত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিচারকাজকে বেআইনি ঘোষণা করেন। এতে বিচারকাজ স্থগিত হয়ে আছে। আমাদের কাছে বোধগম্য নয়, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা সত্ত্বেও বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি আনার উদ্যোগ কেন নিচ্ছে না?
গত বছর জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইয়াবার নাম না থাকলেও এর মূল উপাদান মেথামফিটামিনের উল্লেখ রয়েছে। এগুলো পাচারে বড় ভূমিকা রাখছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওস। আর এগুলো পাচারের রুট হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। দেশে মাদকের বিস্তার এখন যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে অভিভাবকরা রীতিমতো আতঙ্কিত। কিশোর-কিশোরীরাও মাদকের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় হচ্ছে মাদকসংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা। আমরা আশা করি, মাদকসংক্রান্ত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।