ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাবেন বিবাহিতরাও

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রদলের পরবর্তী কমিটিতেও বিবাহিতরা থাকছেন। বিবাহিত ছাত্রনেতাদের বাদ দিয়ে সংগঠনটির কাউন্সিল হলেও এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতি-নির্ধারকরা। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, বিবাহিত নেতাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে সংগঠনের নতুন কমিটিতে তাদের রাখা হবে। সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপককালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, যে-কোনও সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার কর্মকাণ্ডের ওপর মানুষের নজর থাকে বেশি। ফলে ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদে অবিবাহিত ও নিয়মিত ছাত্রদের আনতে কাউন্সিলে শর্ত ছিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিতদের বাদ দিলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন নেতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। কারণ ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির সময় বয়সের কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। গত কমিটি ২ বছরের স্থলে ৫ বছর মেয়াদ পার করেছে। ফলে গত কমিটির অধিকাংশ ছাত্রনেতার বসয় বেশি ও বিবাহিত। এছাড়া গঠনতন্ত্রে বিবাহিতদের কমিটিতে রাখা যাবে না—এমন কোনও নির্দেশনাও ছিল না। তাই আগামী কমিটিতে বিবাহিতদের পদ দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের নব নির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘ছাত্রদলে পদ-পদবি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবাহিতরা থাকতে পারবেন না, এমন কোনও শর্ত ছিল না। হঠাৎ করে এই বিষয়টি চলে আসে। তবে, সবাই আমাদের দল করেন। এখন যারা বিবাহিত, তারা দলের দুঃসময়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। শ্রমও দিয়েছেন। এখন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের বাদ দিলে তারা কোথায় যাবেন? তাই তাদের দলে রাখার চেষ্টা করবো।’
একই প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির অন্যতম সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সম্মেলনের আগে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে নিয়মিত ছাত্ররা থাকবেন। সেখানে কাউন্সিলে বিবাহিতদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল না। সেই অনুযায়ী নিয়মিত ও অবিবাহিতরা কাউন্সিলে প্রার্থী হয়েছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিতরা থাকবেন। এ বিষয়ে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত আছে কিনা, আমার জানা নেই। সবশেষ মিটিংয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘সাধারণ যে-কোনও সংগঠন নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কমিটির নেতাদের প্রাধান্য দেয়। ছাত্রদলের পূর্ববর্তী কমিটিগুলোর ক্ষেত্রেও সেটি হয়ে আসছে। ফলে, এবারের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কমিটির নেতাদের প্রাধান্য দেওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্রদলের সদ্যবিদায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতাই বিবাহিত। এখন বিবাহিতদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে আগামী কমিটিতে তাদের পদ দিয়ে রাখতে হচ্ছে।’
বিএনপির একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫-১৬ দিনের মধ্যে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার চেষ্টা চলছে। সেই অনুযায়ী সংগঠনটির গত কমিটির নেতাদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিগত কমিটির যেসব নেতার কর্মকাণ্ড দল ও সংগঠনের স্বার্থে ছিল, তাদের রেখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির অন্যতম সদস্য ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘ছাত্রদলের নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার চেষ্টা চলছে। আশা করি, দ্রুত ছাত্রদল তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারবে।’ যদিও গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেছিলেন, ‘১০ দিনের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একটি সূত্র ছাত্রদলের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি ও সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটিরে বিবাহিতদের তালিকা দিয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ছাত্রদলে বিবাহিত নেতারা হচ্ছে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল আলম টিটু, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ওয়াহিদ বাবু, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান, সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আরজ আলী শান্ত, সাবেক নাট্য বিষয়ক সম্পাদক আকবর হোসেন, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মিরাজ আজিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুমন খান, সাবেক সদস্য আব্বাস আলী, সাবেক সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান রনি, সাবেক সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, সাবেক যোগাযোগ বিষয়ক সহ-সম্পাদক মাহমুদুল আলম শাহীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক কামাল আহমেদ, সাবেক সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া, সাবেক সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ জালাল খান মনন, সাবেক সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাবেক কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক সানোয়ার আলম, সাবেক সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শিহাবুর রহমান, সাবেক সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক নাসিরুদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান, সাবেক সহ-সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মাতিশ হাসান, সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক ওয়ালিদ রেজা মৃদুল, সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সহ-সম্পাদক এস আর সোহেল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক নিজামুদ্দিন, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিয়া পাঠান পাপন, সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সহ-সম্পাদক শ্যামলী আক্তার, সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সহ-সম্পাদক রাহেলা রঞ্জু, সাবেক ছাত্র বিষয়ক সহ-সম্পাদক শাহিনুর আক্তার স্মৃতি, সাবেক সহ-সম্পাদক ইউসুফ হোসেন সবুজ, সাবেক গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সাবেক সদস্য আব্দুল মমিন, এম কামরুল হাসান, বাবুল আক্তার শান্ত, আনিসুর রহমান চপল, এম এ আজিজ, আব্দুস সালাম রিঙ্কু, মাহফুজা আক্তার স্বর্ণা, দিদারুল আলম বাবু, মাইমুনা মোনেম অনিক, জ্যোতি, অলোক দে শান্তি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিবাহিতদের মধ্যে রয়েছেন-সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ ভদ্র, নজরুল ইসলাম নাহিদ, ফরিদ খান, শিমুল হোসেন, ফয়েজ হোসেন, বেলাল হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক শহীদ মল্লিক রিজভী আহমেদ, পলাশ, সুমন, সহ-সাংগঠনিক উজ্জল, এসকে ফয়সাল, শাফি উল আলম, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আহ্বায়ক আবুল বাশার, ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদ খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের যুগ্ম-আহবায়ক আবু মুসা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের বিবাহিত নেতাদের তালিকায় রয়েছেন-সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, আব্দুর রেজা, আলামিন, আব্দুল হক, আব্দুল আলীম, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মান্নান।
ছাত্রদলের বিবাহিত নেত্রীদের তালিকায় রয়েছেন-নাতাশা তিতুমীর কলেজ যুগ্ন সম্পাদক, তানিয়া আফরিন এলিনা যুগ্ন-সম্পাদক তেজগাঁও কলেজ, বিলকিস আক্তার যুথি বদরুন্নেসা কলেজ, সানজিদা আক্তার তুলি ইডেন কলেজ, সাবিনা ইয়াসমিন ইডেন কলেজ, সায়েদা সুমাইয়া ইডেন কলেজ, শিরিন আক্তার ইডেন কলেজ, ফাহিমা আক্তার ইডেন কলেজ, শারমিন আক্তার বদরুন্নেসা, মাকসুদা মনি তেজগাঁও কলেজ, মৌসুমী হক মৌ ইডেন কলেজ, জান্নাত রোজ ইডেন কলেজ, পপি তিতুমীর কলেজ সহ-সভাপতি।
প্রসঙ্গত, বিবাহিত হওয়ার কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বরের কাউন্সিলে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে অনেকেরই মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ২৮ বছর পর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলদের প্রত্যক্ষ ভোটে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয় ইকবাল হোসেন শ্যামল।