এরশাদের শূন্য আসনে মনোনয়ন দৌড়ে ২০ প্রার্থী

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সদ্য প্রয়াত জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার শূন্য আসনে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকটাই সরগরম রংপুর। সব দলের প্রার্থীই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপেক্ষা কেন্দ্রের গ্রীন সিগন্যালের। রাজনৈতিক বিবেচনায় এই আসনটির গুরুত্ব অনেক। কারণ জাপার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরের এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এরশাদই ছিলেন একমাত্র জনপ্রতিনিধি। জাপা চেয়ারম্যানের অবর্তমানে অন্য দলগুলো এই আসনে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন অন্তত ছয়জন। এর মধ্যে তিনজনই এরশাদের পরিবারের সদস্য। ছেলে সাদকে এই আসনে নির্বাচন করাতে চান দলের সিনিয়ার কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। এর বাইরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে রয়েছে একাধিক প্রার্থী। আলোচনা আছে, মহাজোটে জাতীয় নির্বাচন হলেও এই আসন ছাড় দিতে রাজি নয় জাপা-আওয়ামী লীগ কোন দলই। এর বাইরে অন্য ছোট দলের প্রার্থীরাও বসে নেই। ইতোমধ্যে জেলা ও মহানগর জাপার পক্ষ থেকে কেন্দ্রে একক প্রার্থীর নাম পাঠানো হয়েছে।
গত ১৪ জুলাই মারা যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংসদ সচিবালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আ ই ম গোলাম কিবরিয়া ১৬ জুলাই আসনটি শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করেন। গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩০ আষাঢ় ১৪২৬/১৪ জুলাই ২০১৯ তারিখ পূর্বাহ্নে মৃত্যুবরণ করায় একাদশ জাতীয় সংসদের ২১ রংপুর-৩ আসনটি উক্ত তারিখে শূন্য হয়েছে।’
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আসন শূন্য হওয়ার দিন থেকেই নব্বই দিন গণনা করা হয়। এক্ষেত্রে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে ওই আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, সংসদ সচিবালয় গেজেট প্রকাশের পর আমরা উপনির্বাচনের জন্য বিষয়টি কমিশনের কাছে উত্থাপন করি। কমিশনই সিদ্ধান্ত নেন কখন ভোট হবে। বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কমিশনে তোলা হবে। সংসদ সচিবালয় ইতোমধ্যে এইচএম এরশাদের আসনটি শূন্য ঘোষণা করার পাশাপাশি ওয়েবসাইট থেকে তার নাম সরিয়ে নিয়েছে।
এরশাদের অবর্তমানে এই আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন এ নিয়ে জাপার কেন্দ্র থেকে রংপুরে তৃণমূল পর্যন্ত ব্যাপক আলোচনা চলছে। তাছাড়া ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর থেকে এরশাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরে জাপার আসন কমতে থাকে। মহাজোট করার সুযোগে রংপুরের অনেক আসন চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। তাই শেষ পর্যন্ত এরশাদের আসনটি জাপার ঘরে থাকছে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও। তাই আসন রক্ষা জাপার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণও। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ছাড় দিচ্ছেনা জাপাকে। রংপুরের জাপার স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিশ্বাস এরশাদের মৃত্যুর পর আবেগের জায়গা থেকেই সাবেক এই রাষ্ট্রপতির জনপ্রিয়তা আরও অনেক বেশি বেড়েছে। এ আসনে যেই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট করুক না কেন তার সঙ্গে অন্য কেন দল পাত্তাই পাবে না।
এদিকে জাতীয় পার্টিসহ কোন দলই এখন পর্যন্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন। সূত্র জানায়, ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর মধ্যে দুইবার এ আসনে জেল থেকেই নির্বাচিত হন তিনি। ভোটের রাজনীতিতে এখানে কখনই ভাল ফল করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সব সময় এই অঞ্চলে বিএনপি পিছিয়ে ছিল।
জাতীয় পার্টির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে জাপার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর নাম যাচ্ছে। রওশন এরশাদ চাইছেন ছেলে শাদ এরশাদকে প্রার্থী করতে। কিন্তু সাদের রংপুরে নিয়মিত যাতায়াত না থাকায় তাকে গ্রহণ করছে না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অনেকে এরশাদের আমেরিকান প্রবাসী ছোট ভাই ড. হুসেইন মুর্শেদের কথা বললেও তিনি কোন আগ্রহ দেখাননি।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান এবং জেলা নেতা এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম রাজুর নাম শোনা যাচ্ছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য চেীধুরী খালেকুজ্জামান জানান, এই উপনির্বাচনে অবশ্যই আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে। তিনি নিজেই মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাফর হোসেন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল জানান, দল ইতোমধ্যে এই আসনের অংশ নেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রংপুর মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, নব্বইয়ের পর থেকে প্রতিটি আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। ১৯৯০-’৯৬ সাল পর্যন্ত এক মাসও নিজ বাসায় থাকতে পারিনি। এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে আমিই প্রথম আসামি হয়েছিলাম। সে সময় আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছিলেন তারা সিংহভাগই এখন জাপায় নেই। রংপুরের মানুষের সেন্টিমেন্টকে যদি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে আমাকে মনোনয়ন দেবে।
রংপুর মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, রংপুর সিটি মেয়র, মহানগরীর ২৫ ওয়ার্ড ও সদরের দুই ভাইস চেয়ারম্যান সম্মিলিতভাবে এস এম ইয়াসিরকে জাপা থেকে একক প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছি এবং এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আশা করি কেন্দ্র তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে প্রধান্য দিয়ে ইয়াসিরকেই মনোনয়ন দেবেন।
এছাড়াও পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রিটা রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, পিডিপির সাব্বির আহমেদ, বাসদের আনোয়ার হোসেন বাবলু, জাকের পার্টির আলমগীর হোসেন আলম, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান ম-লও এরশাদের শূন্য হওয়া আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।