সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিক ৮০ লাখ টাকা সহ ঢাকায় গ্রেফতার

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৮০ লাখ টাকাসহ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিককে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পার্থ বণিকের ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে এ টাকা উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে দুদক টিম পার্থের ব্যবহার করা একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করেছে। প্রাইভেট কারটি পার্থের বন্ধু শাহিনের বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স থাকার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুদক প্রধান কার্যালয়ে পার্থ বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কমিশনের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ। পরে ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা বাসায় রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে পরিচালক ইউছুফের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল তার ভূতের গলি বাসায় অভিযান চালায়।
এদিকে পার্থ বণিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। এদিকে গ্রেফতার হওয়া পার্থ বণিককে অতিদ্রুতই সাময়িক বরখাস্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অপরদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই পার্থ বণিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা।
এর আগে ২০১২ সালের জুনে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহামন নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন জামায়াত নেতাকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর বর্তমান সরকার ওই বছরের জুনেই এই পার্থ গোপাল বণিককে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে আবার তিনি নানা তদন্তের পর অভিযোগ থেকে অব্যাহতির পর স্বপদে বহাল হন। দুদক সূত্র জানায়, রবিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতের গলি এলাকায় তার বাসায় অভিযান ৮০ লাখ টাকা জব্দ করার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ওই সব টাকা ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জন করে পার্থ গোপাল বণিক তার বাসায় গচ্ছিত রাখেন। দুদক টিম দুপুরে পার্থ বণিককে সঙ্গে নিয়ে ঘুষসহ দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা টাকা উদ্ধারে অভিযানে বের হয় দুদক টিম। ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় তারা। দুদকের দাবি, ফ্ল্যাটটির মালিক পার্থ। তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরাও সেখানে বসবাস করেন। তবে পার্থের দাবি, ফ্ল্যাটটি তার শাশুড়ি মঞ্জু সাহার। দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ সাংবাদিকদের জানান, এদিন পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, ভূতের গলির বাসায় ৩০ লাখ টাকা আছে। এভাবে পরে আরও তথ্য দেন। সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে পার্থের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয় এবং একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। এদিকে রবিবার কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। প্রশান্ত কুমার বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ময়মনসিংহগামী ট্রেন থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন তিনি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। পরে সোহেল রানার বিষয়ে অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতি নিয়ে নানা তথ্য পায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুল আলম। কমিটি সে সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিকসহ ৪৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির তথ্য পায়। যদিও পার্থ গোপাল বণিক ও প্রশান্ত কুমার রায় বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। একইসঙ্গে জেলার সোহেল রানা তার কুকীর্তি ঢাকতেই ডিআইজি প্রিজন্স ও সিনিয়র জেল সুপারকে ফাঁসাতে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন তারা। এরপর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণীও চাওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে পার্থ গোপাল বণিকও সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে দুদক কর্তৃক গ্রেফতারের বিষয়টি মাত্র শুনলাম। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেব। পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে অতিদ্রুতই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে।