তাহিরপুরে বানের পানি কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে

23

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
বানের পানি কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে পথে পথে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। ১ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ৩ ঘন্টায়। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের বাহন নৌকা। ভোগান্তিতে উপজেলা সদরে আসা লোকজন।
তাহিরপুর সদর, বালিজুরী, দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল, উত্তর বড়দল ও বালিজুরী সহ ৭ ইউনিয়ন নিয়ে তাহিরপুর উপজেলার ভৌগলিক অবস্থান। বন্যার পূর্বে একটি ইউনিয়ন (দক্ষিণ শ্রীপুর) ব্যতিত ৬ টি ইউনিয়নের সাথে সড়ক পথে কম বেশি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল উপজেলা সদরের সাথে। দিনে কিংবা রাতে যে কোন সময় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করা যেত। সম্প্রতি বন্যায় তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে বৌলাই নদীর ব্রীজের উত্তর পাশ হতে পাতারগাঁও সড়ক পর্যন্ত একাধিক স্থানে পাহাড়ি ঢলে পানির থোরে সড়ক ভেঙ্গে যায়। সড়কটি স্থানে স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বাদাঘাট, উত্তর শ্রীপুর, উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়দলের কিছু অংশে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পরে।
অপরদিকে তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কে আনোয়ারপুর ব্রীজের পূর্ব পাশে পাহাড়ি ঢলের পানির থোরে এলজিইডির ২শ মিটার সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার বালিজুরী ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে জেলা সদরের সাথেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে।
জেলা সদরের সাথে তাহিরপুরের সড়ক দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। ৩০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। বর্তমানে সময় লাগছে ৪ ঘন্টা। তা সরাসরি নয়, কখনো বাইকে, কখনো অটোতে কিংবা কখনো সিএনজি করে তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা, দুর্গাপুর ও সুনামগঞ্জ সদর লালপুর নামক স্থানে নৌকায় পারি দিয়ে সুনামগঞ্জ সদরের সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। অপরদিকে বাদাঘাট থেকে তাহিরপুর সড়কে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। সড়ক পথে যাতায়াত করতে সময় ব্যায় হত ১৫ মিনিট। বর্তমানে তাহিরপুর সদর থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক পথ নৌকায় পাড়ি দিয়ে ঐ সমস্ত ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।
তাহিরপুর সুনামগঞ্জ ৩০ কিলোমিটার সড়কে ৫ স্থানে ভাঙ্গাচোরা ও সড়কে পানি থাকায় উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদর থেকে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ কমে গেছে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়া হাওর ঘুরতে আসা পর্যটকরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। সড়ক পথে কোন পন্য পরিবহনের গাড়ি চলাচল না করায় বাজারের পণ্য আনা নেয়া বন্ধ রয়েছে।
ভাটি তাহিরপুর গ্রামের মোটর সাইকলে চালক মিয়া হোসেন, তিনি নিয়মতি ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালান তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কে। সড়ক ভাঙ্গা থাকার কারণে গত ১৫ দিন ধরে তিনি এই পথে মোটর বাইক চালাতে পারছেন না।
টাঙ্গুয়া হাওর ঘুরতে ইচ্ছুক ঢাকায় বসবাসকারী ট্রাভেলার সাদেকুর রহমান বাবলু তিনি আগামী শুক্রবার হাওরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, তাই তিনি বাসের আগাম টিকিটও কেটেছেন কিন্তু সড়কে এ অবস্থায় অনেকটা চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি।
বাদাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ল প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান, তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার কাজে উপজেলা সদর আসতে হলে প্রথমে বাইক কওে ৫ কিলোমিটার তার পর নৌকায় আর ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্ট করে সদরে আসতে হচ্ছে।
বালিজুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে সব কটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পরেছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইদুল্লা মিয়া বলেন, বন্যার পানি কমলে সড়কগুলো মেরামত করা হবে।
উল্লেখ্য সম্প্রতি জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বৃহত্তর সিলেট ও ভারতের মেঘালয়ে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে বন্যা সৃষ্ট হয়। সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়, সেই সাথে পানির থোরে ভেঙ্গে যায় জেলা সদরের সড়ক সহ উপজেলার আভ্যন্তরীণ যোগাযোর সব’কটি সড়ক।