ফাইনালে ইংল্যান্ড না অস্ট্রেলিয়া ফয়সালা আজ

21

স্পোর্টস ডেস্ক :
লীগপর্বে চরম উত্থান-পতন আর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে এসেছে ইংল্যান্ড। ফেবারিট হিসেবে আসর শুরু করা আয়োজকদের যে এত কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে সেটি হয়তো অনেকেই ভাবেননি। পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার মতো দুটি দলের কাছে হারে কোণঠাসা ইয়ন মরগানের দল শক্তিধর ভারত আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ইংলিশদের জন্য বড় বাধা আজকের সেমিফাইনাল। যেখানে প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। যারা কিনা আগের এগারো আসরে পাঁচবার শিরোপা জিতে বিশ্বকাপটাকে প্রায় পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে! এ্যারন ফিঞ্চের দল এবারও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। ফর্মের তুঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্করা। প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া তাদের খুবই পরিচিত, ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের জন্য এটিই হতে পারে বাড়তি প্রেরণা। ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে অসিরা যেমন তাদের চিরশত্রু তেমনি চিরচেনাও। এজবাস্টনে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম তিন আসরের আয়োজক ইংলিশরা। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে ফাইনালে উঠে হারতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তানে যৌথভাবে আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনালে হার অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে হার পাকিস্তানের কাছে। দুর্ভাগ্য তিনবার ফাইনালে উঠে কুলিন দেশটির এখনও পর্যন্ত একবারও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। এছাড়া ১৯৭৫ ও ১৯৮৩ সালে ঘরের মাটিতে সেমিফাইনালে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। হেডিংলিতে ১৯৭৫-এ প্রথম বিশ্বকাপেই সেমিতে এই অসিদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিল ইংলিশরা। তবে আধুনিক সময়ে এবারের মতো এত ভাল দল ইংল্যান্ডের আর কখনই ছিল না। জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, বেন স্টোকস, জোফরা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট, মার্ক উডদের নিয়ে পাওয়ার ক্রিকেটের পসার সাজিয়ে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে ঘরের মাটিতে ১২তম বিশ্বকাপ খেলছে ইয়ন মরগানের দল।
অগ্নিপরীক্ষার এ ম্যাচে দীর্ঘ চার বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে ইংলিশদের। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। এমন হতাশাজনক ঘটনাটি দলের ওয়ানডে ম্যাচের ধরন নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে বাধ্য করেছিল দেশটির থিঙ্কট্যাঙ্কদের। যাতে তারা সফলও হয়েছে। মূলত এরপর ওয়ানডেতে ‘নিজস্ব ঘরানার’ ক্রিকেট খেলতে শুরু করে ইংলিশরা। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভর বেইলিস কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিতে শুরু থেকেই ছক কষা শুরু করেন। এতে দলের পরিবর্তনটাও এসেছে চোখে পড়ার মতো। মরগানের দারুণ নেতৃত্বে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থান দখল করে ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর দারুণ নৈপুণ্যে বড় রান সংগ্রহকে আবর্তন করেই ইংলিশরা এগিয়ে গেছে। এখন তাদের চাওয়া সেমিফাইনাল নয় শিরোপা। ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠতে পারলে বিনা মূল্যে বৃটেনে ম্যাচটি সম্প্রচার করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে স্বাগতিক স্যাটেলাইট সম্প্রচারক স্কাই স্পোর্টস।
অন্যদিকে রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বকাপে সর্বশেষ সাত আসরের কোন সেমিফাইনালেই হারেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে ২০ বছর আগে এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ‘টাই’ করেছিল তারা। যদিও রান রেটে এগিয়ে থাকার কারণে ওই ম্যাচ থেকে ফাইনালের টিকেট পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এবারও মানসিকভাবে এগিয়ে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কারণ চলমান টুর্নামেন্টের গ্রুপ-পর্বে গত মাসে লর্ডসে তারা এ্যাশেজ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে ৬৪ রানে হারিয়েছিল। দুই বাঁহাতি পেসার জেসন বেহরেনডর্ফ ও মিচেল স্টার্কের ভাগাভাগি করে ৯ উইকেট শিকারের পর অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ ইংলিশ বোলারদের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। ওই ম্যাচটিতে অবশ্য ইংলিশ দলের হয়ে খেলতে পারেননি তাদের ‘সৌভাগ্যবান’ ক্রিকেটার জেসন রয়। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে বিশ্রামে থাকতে হয়েছিল তাকে। তবে ধুন্ধুমার এই ওপেনার সুস্থ হয়ে ফেরার পরই বদলে যায় ইংল্যান্ড দলের চেহারা। পরের দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়েছেন তিনি। যার সুবাদে শেষ চার নিশ্চিত হয় স্বাগতিকদের।
পক্ষান্তরে ২০০১ এ্যাশেজ টেস্টের পর এজবাস্টনে কোন ফর্মেটের ক্রিকেটেই জয় নেই অস্ট্রেলিয়ার। শুধু তাই নয়, গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিস্ময়করভাবে ১০ রানে হেরে গেছে তারা। স্টার্ককে মানিয়ে নেয়ার পথ খুঁজতে থাকা ইংল্যান্ডের লক্ষ্য থাকবে অসি টপঅর্ডারের রানের গতিকে প্রতিহত করা। বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে ১২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ব্যাটিং তা-ব শুরু করেছেন অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন ৬৩৮ রান। তারপরও ইংলিশ পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেট মনে করেন ম্যাচে তারা আরও উজ্জীবিত থাকবেন। তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে আমরা ভাল ক্রিকেট খেলছি। র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠে এসেছি। নিজেদের দিনে আমরা যে কোন দলকেই হারাতে পারব বলে মনে করি।’ এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন উসমান খাজা। তার পরিবর্তিত হিসেবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের একাদশে ডাক পেয়েছেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। আজকের মহাগুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল দিয়ে বিশ্বকাপে সরাসরি অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে তার। ব্যাটিং লাইনআপ শক্তিশালী করতেই হ্যান্ডসকম্বকে ডাকা হয়েছে।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে সত্যি কথাই বলতে চাই। অবশ্যই পিটার খেলছে এবং এটা শতভাগ সত্যি। এটা তার প্রাপ্য। প্রাথমিক দলে তার সুযোগ না পাওয়াটা ছিল দুর্ভাগ্য। এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে আছে হ্যান্ডসকম্ব। অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়েও সে ভাল খেলেছে। মিডল অর্ডারে তাকে পেয়ে দলের ভারসাম্য ফিরে এসেছে।’ ল্যাঙ্গার আরও নিশ্চিত করেছেন খাজার বদলি হিসেবে দলে এসেছেন ম্যাথু ওয়েড। তবে তারজন্য আইসিসি’র টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেট অস্ট্র্রেলয়া। ল্যাঙ্গার বলেন, ঘরোয়া আসরে ওয়েড দারুণভাবে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। যদি সে দলে সুযোগ পায় তবে অভিজ্ঞতার নিরিখে বলাই যায় তার ব্যাপারে আমরা সবাই আত্মবিশ্বাসী। এদিকে পিঠের ইনজুরিতে ভোগা মার্কাস স্টয়নিস অস্ট্রেলিয়াকে কিছুটা সুখবর দিয়েছেন। নেটে তিনি নিজেকে ফিট প্রমাণ করেছেন। ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বড় ভরসা ওয়ার্নার ও অধিনায়ক ফিঞ্চ। আজ আরেক তারকা স্টিভেন স্মিথের কাছ থেকে দল বড় ইনিংস আশা করবে।
৯ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে এবার সেরা বোলার মিচেল স্টার্ক ইতোমধ্যে রেকর্ড ছুঁয়েছেন। আছেন প্যাট কামিন্স, বেহেনডর্ফের মতো পেসার। ১৯৭১ থেকে এ পর্যন্ত মুখোমুখি ১৪৮ ওয়ানডের ৮২টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার। ইংল্যান্ডের জয় ৬১। টাই ২ ও পরিত্যক্ত ৩। আর বিশ্বকাপে ৮ দেখায় ৬ জয় অস্ট্রেলিয়ার। ১৯৯২ সালের পর বিশ্বকাপে কখনই অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। এবার ইতিহাসের সেরা দল নিয়ে ইয়ন মরগানের দল কি পারবে অসিদের থামাতে? এজবাস্টনে সেটিই দেখার অপেক্ষা।