আজ থেকে দেশব্যাপী টিকাদান ক্যাম্পেন ॥ ১৮ নয়, টিকা দেয়ার বয়স ২৫ বছর

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ শনিবার থেকে ৫ দিনব্যাপী দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে করোনার টিকাদান ক্যাম্পেন। এই সময়ে ৩২ লাখ মানুষকে করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। তিনি জানান, এই ক্যাম্পেনের আওতায় সারাদেশে ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে একযোগে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হবে।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাকক্ষে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এ সময় টিকাগ্রহণের বয়সসীমা ১৮ থেকে ২৫ করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, ১৮ বছর বয়সীদের অনেকেরই এনআইডি কার্ড নাই। মাঠে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেটা আমরা সামাল দিতে পারব না। তাই বয়সসীমা ২৫ করা হয়েছে।
মহাপরিচালক বলেন, এখন পর্যন্ত এক কোটি ২৮ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। নিবন্ধন করেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার। ঢাকায় যারা নিবন্ধন করছেন তারা ২০ থেকে ২৫ দিন পরে ভ্যাকসিনের এসএমএস পাচ্ছেন, কারণ ওই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষে একসঙ্গে এত মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব না। সরকারের হাতে এত টিকা নেই যে এই মানুষগুলোকে দিতে পারবে।
এ সময় তিনি বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার সম্প্রসারিত আকারে (আজ) দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৭ আগষ্ট ২৫ বছর ও তদুর্ধ জনগোষ্ঠী; অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আমরা টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আনতে যাচ্ছি। মহাপরিচালক বলেন, দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেন শুরু হবে। ৮ ও ৯ আগষ্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে এবং ৭ থেকে ৯ আগষ্ট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচী চলবে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ ও ৯ আগষ্ট ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালু থাকবে। ১০ থেকে ১২ আগষ্ট জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর ৫৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এ সময় টিকা নেয়ার বয়সসীমা ১৮ থেকে কেন আবার ২৫ বছর করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮ বছর বয়সী অনেকের এনআইডি নেই। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, এই এনআইডি ছাড়া ১৮ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনতে যাই, মাঠে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেটাকে আমরা সামাল দিতে পারব না। সে জন্য অনেক আলোচনা করে আমরা ঠিক করেছি বয়সসীমা ২৫ বছর হবে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ভ্যাকসিনের ডিপ্লোম্যাসি আছে। যে ভ্যাকসিন বেশি আকারে আমাদের কাছে দেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে সিনোফার্ম। এই ভ্যাকসিন সিঙ্গেল ডোজ, সিঙ্গেল ভায়েল। এর আগে আমরা এনেছিলাম এ্যাস্ট্রাজেনেকা, সেটা ছিল ১০টি ডোজের একটি ভায়েল। এটি বেশি পরিমাণে সংরক্ষণ করা যায়। ঈদের আগে আমাদের টিকা গ্রহণের পরিমাণ কম ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাম্পেনের ঘোষণা দেয়ার পরে গত ১০ দিনে আমরা দেখলাম প্রায় ৩০ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। এটাও একটা বড় বিষয়। মহাপরিচালক বলেন, আমরা চিন্তা করেছিলাম, যদি আমরা ম্যাসিভ আকারে ক্যাম্পেন না করতে পারি বা মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করতে না পারি তাহলে সারাদেশে যেখানে আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে এত মানুষকে আমরা কীভাবে কাভার করব? এটা পাইলট প্রজেক্ট বলা যেতে পারে। আমরা নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করতে চাই। আমরা দেখতে চাই, আমাদের লোকেরা, প্রান্তিক পর্যায়ে এক দিনে কী পরিমাণ টিকা নিতে পারেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে অধিদফতরের পরিচালক ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ শামসুল হক স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনাগুলো সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে। পরিচালক (স্বাস্থ্য), করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য গঠিত-বিভাগীয় কমিটির সদস্য, সিটি করোপোরেশন কমিটির সদস্য সচিব, জেলা কমিটির সদস্য সচিব, উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং সব পৌরসভার মেডিক্যাল অফিসারদের কাছে এটি পাঠানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭-৯ আগস্ট ভ্যাকসিন ক্যাম্পেন কার্যক্রম চলমান রাখা যাবে বলে জানায় অধিদফতর। এছাড়া এই তিনদিন প্রয়োজনে দুর্গম এলাকায় (হার্ড টু রিচ এরিয়া) স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পেন পরিচালনা করা যেতে পারে বলেও জানানো হয়। বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেন বাস্তবায়ন বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এমন পরিবর্তিত নির্দেশনা দেয় অধিদফতর।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা, এমআইএস পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মিজানুর রহমান, ইপিআই কর্মসূচীর ব্যবস্থাপক ডাঃ মওলা বক্স চৌধুরী।
অগ্রাধিকার পাবেন যারা : এই ক্যাম্পেনে টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্ক, নারী ও প্রতিবন্ধীরা। এ তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এই ক্যাম্পেনের মাধ্যমে মূলত ২৫ বছর তদুর্ধ জনগোষ্ঠী, পঞ্চাশোর্ধ জনগোষ্ঠী, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।