বাজেটে আনা হচ্ছে নানা সংশোধনী ॥ বিদ্যুৎ নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের টিআইএন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হচ্ছে

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হচ্ছে। স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আবেদনের পর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানা গেছে। শনিবার (২৯ জুন) সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী, প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। নিয়ম অনুযায়ী, সরকার বাজেটের যেসব প্রস্তাব বাতিল বা যুক্ত করবে সেগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ বাস্তবায়ন করা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। তাই প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো চূড়ান্তভাবে বাতিল হয় বা নতুন করে গৃহীত হয়। শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়, আরও কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব পরিবর্তনসহ শনিবার পাস হবে নতুন অর্থবছরের অর্থবিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে অগ্রিম কর বাবদ যে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিলো তা বাদ দেওয়া হচ্ছে। বাতিল নয়, কিছুটা কমিয়ে নির্ধারণ করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসা) ও ভার্চুয়াল বিজনেস বা অনলাইনে পণ্য বেচাকেনাসহ বেশকিছু খাতের ভ্যাট। নতুন বাজেটে এসব খাতে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জনসাধারণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে সরকার। সরকারের যুক্তি অনুযায়ী, বর্তমান করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়ালে করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে নেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে কিভাবে? একই সঙ্গে সরকারের নির্ধারিত রাজস্ব আয় বাড়বে কিভাবে? অথচ সাধারণ মানুষ চায়- করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হোক। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশের পাশাপাশি অগ্রিম ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ধরা হয়েছে। ফলে এ খাতে নতুন করে ভ্যাট দাঁড়াবে ২০ শতাংশ। এতে ব্যাগপ্রতি সিমেন্টের দাম ৪২ টাকা বাড়বে। বাজেটে রড শিল্পের ওপর ৬৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাবে টনপ্রতি রডের দাম বাড়বে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এতে মধ্যবিত্তের গৃহনির্মাণে খরচ বাড়বে, একই সঙ্গে সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বিশেষ করে সরকারের মেগা প্রকল্প ও আবাসন খাত সমস্যায় পড়বে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশার কথা ভেবে এ খাতে অগ্রিম আয়কর তুলে নেওয়া হতে পারে।
নতুন বাজেটে পুঁজিবাজার বিকাশে বেশকিছু সুবিধা নতুন করে যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভ ৫০ শতাংশের বেশি হলে ১৫ শতাংশ কর ধার্য। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই কর বহাল হলে যেকোনও কোম্পানির পুঁজি গঠনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কোম্পানিগুলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা ব্যবসা সম্প্রসারণে রিজার্ভ ব্যবহার করে। এই কর থাকলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। তাই এটি পরিবর্তন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ব্যাপক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রে বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। তবে বিষয়টি শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর ওপর গিয়ে ঠেকবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের বাজেটে সবচেয়ে সমালোচিত বিষয় এটি। বাড়তি এই কর আরোপের ফলে সমাজের মধ্যবিত্ত, অবসরভোগী ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের আয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। এটি নিয়ে সংসদে সরকার দলীয় সদস্যরাও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও দাবি উত্থাপন করেছেন যাতে এটি চূড়ান্তভাবে আরোপ করা না হয়। তাই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। তবে এ নিয়ে এখনও দুটি চিন্তা রয়েছে। এর একটি হলো, বাজারে প্রচলিত সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে। অন্যটি হলো, শুধু পরিবারভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বৈঠকের পর বৈঠক করছেন। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ও অর্থবিল- ২০১৯ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের বেশকিছু বিষয় নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।