সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ চাই

21

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছেই না। সড়ক-শৃঙ্খলা বলে সত্যিই কিছু আছে! প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় লোকজন আহত-নিহত হচ্ছে; জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। সোমবারেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত হওয়ার ঘটনাকে আমরা শুধুই সংখ্যায় প্রকাশ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এর সামাজিক-পারিবারিক ও মানসিক অভিঘাতকে বুঝে দেখার ফুরসত আমাদের নেই। একটি দুর্ঘটনায় কোনো পরিবার সারা জীবনের জন্য দুঃসহ পরিস্থিতিতে পড়ে যায়, সে কথা সরকার, সমাজ বা ব্যক্তি—কেউই ভাবে বলে মনে হয় না।
দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে, তবে সেটা আপতিক বিষয়; স্বাভাবিক বিষয় নয়। কিন্তু এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়মে ও নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। এর কারণগুলো প্রায় সবার জানা। ফিটনেসহীন যানবাহন, অদক্ষ বা অবৈধ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক নিয়ম না মানা, ভাঙাচোরা সড়ক, যাত্রী বা পথচারীর অসতর্কতা, ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা, উল্টাপথে গাড়ি চালানো, মহাসড়কের পাশে হাটবাজার, মহাসড়কে বিভিন্ন অসম গতির গাড়ির চলাচল, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন না করা, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো প্রভৃতি। র‌্যাবের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ৭০ শতাংশ চালক ও সহযোগী মাদকসেবী।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ জানা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষই নিদানের ব্যবস্থা করতে আন্তরিক নয়। কখনো ব্যবস্থা নিতে গেলে পরিবহন শ্রমিক-মালিক সমিতি বা তাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক পক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনতর বাধা থাকলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো অসাধু হলে, আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে আইন প্রয়োগে অনীহা বা দৃঢ়তার অভাব থাকলে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে কী করে? বিষয়টি নিয়ে আদালতও প্রশ্ন তুলেছেন। গত ২৭ মার্চ হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে সারা দেশে ফিটনেসহীন ও নিবন্ধনহীন যানবাহন এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য জানতে চেয়েছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের ডিসি ও বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের কাছে। বিআরটিএ ও পুলিশের পক্ষ থেকে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর সোমবার শুনানিকালে আদালত প্রশ্ন করেন, পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে অনিবন্ধিত যান কিভাবে চলে? কথা সেখানেই। বাস্তবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষই আইন প্রয়োগে কঠোর নয়। তাই ট্রাফিক সপ্তাহ পালন বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে না।
অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে গাড়ির ফিটনেস, নিবন্ধন ও সড়কবিষয়ক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। চালকদের জন্য ডোপ টেস্ট চালু করতে হবে, মহাসড়ক বাধাহীন করতে হবে, যাত্রী-পথচারীর সচেতনতাও বাড়াতে হবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্টরা দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত তৎপর হবে।