রোহিঙ্গা সংকট দূরীকরণে উদ্যোগ

22

রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে তা বাংলাদেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে তাঁদের আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যে যথেষ্ট সচেতন, তাঁর বক্তব্যেই তেমন আভাস পাওয়া গেছে। জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে গত রবিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই সংকট সমাধানে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে চীন যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে সেই লক্ষ্যে আগামী মাসে তিনি চীন সফর করবেন। এই সংকট নিয়ে নানাজন নানা স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়—সে বিষয়েও তিনি সম্যক ধারণা দেন। তিনি বলেন, দাতা সংস্থার লোকজন চায় না, রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। এমনকি কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগেরও বিরোধিতা করছে তারা। অথচ এরই মধ্যে সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য মজবুত ও সুন্দর ঘর তৈরি করে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে এই সংকট নিয়ে নানাজন নানা ধরনের খেলাধুলা করার চেষ্টা করছে। অথচ বিষয়টি বাংলাদেশের মাথার ওপর বহন অযোগ্য এক বোঝা হয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই বলেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। চুক্তি করেও তারা চুক্তির শর্ত মানছে না। সেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরির কাজটিও তারা ঠিকমতো করছে না। প্রধানমন্ত্রীর মতো সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, এই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মিয়ানমার বর্তমানে চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। বাংলাদেশের সঙ্গেও চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানি, চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই আমরা আশা করি, শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর (সম্ভাব্য তারিখ ১ থেকে ৫ জুলাই) এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।
কক্সবাজারে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সাত লাখের বাইরে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অতীতে বিভিন্ন সময়ে এ দেশে এসে থেকে গেছে। তারা ক্রমে স্থানীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ ও অপরাধীচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই রাতের আঁধারে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার নির্দেশ দিয়েছে চারদিকে সিকিউরিটি ব্যারিকেড গড়ে তুলতে এবং সব সময় কড়া টহলের মধ্যে রাখতে। আমরাও মনে করি, দ্রুততম সময়ে এমন ব্যারিকেড গড়ে তোলা জরুরি।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাপান সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। জাপান ও ফিনল্যান্ড অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা আশা করি, চীনও এই সংকট সমাধানে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।