বাংলাদেশ কৃষি শুমারি ২০১৯

49

মো. আজগর আলী

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কৃষি খাত উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
মানবসভ্যতা বিকাশের প্রতিটি স্তরে রয়েছে কৃষির অনবদ্য ভূমিকা। মানুষ নিজ বুদ্ধিবলে জড়শক্তিকে কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করেছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন উন্মেষে মানুষের চাহিদার প্রসার গ্রামীণ সভ্যতার শান্ত জীবনকে চঞ্চল করে তুলল। এভাবে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটতে শুরু হলো। একদিকে বিজ্ঞান ও শিল্পের উন্নতি, অন্যদিকে নতুন নতুন জ্ঞানের আবেশে জীবিকা সত্তাভিত্তিক চাষ বাণিজ্যিক বাজারভিত্তিক চাষে রূপান্তরিত হলো। আজ শুধু খাদ্যের প্রয়োজনে নহে, আজ বাণিজ্যেরও প্রয়োজন। বিনিময় অর্থনীতিতে উন্নত দেশগুলো আজ কৃষিকে নতুন কলেবর দান করেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে কৃষিকার্য আজ কোনো শস্য চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার সুযোগ প্রয়োগ করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজদ্রব্য উৎপাদনকল্পে মৎস্যচাষ, পশুপালন, বনভূমি সংরক্ষণ প্রভৃতি বর্তমানে ব্যাপকভাবে কৃষিকাজের আওতায় আনা হয়েছে। অধিক লোকসংখ্যার চাপ অথচ সীমিত জমি। স্বাভাবিকভাবেই অল্প জমি থেকে বেশি ফসল উৎপাদনের প্রচেষ্টার ফলে উৎপাদনের উপাদানগুলো সমভাবে ব্যবহৃত না হয়ে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি (খধি ড়ভ উরসরহরংযরহম জবঃঁৎহং) কার্যকর হয়। আবার কৃষিব্যবস্থায় মানুষ-জমির অনুপাতের ব্যাপক তারতম্য ও এর ফলাফল হিসাব করা দরকার। একদিকে কেবল মানুষের সংখ্যা না গুণে এর সংস্কৃতি, কর্মকুশলতা ও কর্মক্ষমতা বিচার করা দরকার। শুধু জমির পরিমাণ না মেপে সমগ্র কার্যকরী জমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে আনা দরকার।
উন্নত দেশে কৃষকের নিজেদের ফসল বাজারজাত করে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা প্রয়োজনীয়দ্রব্যাদি ক্রয় করে। সেখানে বিনিময় অর্থনীতিতে বিক্রয় মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় ভূমির কৃষিযোগ্যতা নির্ধারণের প্রধান অঙ্গ। তারা বিক্রয় মূল্যের ওপর নির্ভর করে কতটা জমিতে চাষ করতে হবে তা ঠিক করে থাকে। ফলে অধিক উৎপাদনের ফলে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। এর উল্টোটা আমাদের দেশে বিরাজমান। এখানে কায়েমি স্বার্থের জুয়া খেলা চলে। অথচ যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায় তাদের কথা কৃষি পঞ্জির হালখাতায় কতটুকু স্থান পায় তা না বললেও চলে। সামগ্রিক সম্পদের সাহায্যে কৃষিকাজের উন্নতি সাধন হলেও এর উন্নতির সীমাও প্রকৃতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। মানুষ তার বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা এখন পর্যন্ত ১ (এক) গ্রাম মাটি সৃষ্টি করতে পারেনি। এ বিষয়ে তাকে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতে হয় প্রকৃতির দানের ওপর। এক ফোঁটা বৃষ্টির পানির জন্য এখনো বহু কৃষক আকাশপানে তাকিয়ে থাকেন। কারণ কৃষিতে রয়েছে জীবনের সঞ্চারণ। স্মরণাতীতকাল থেকে কৃষি আমাদের খাদ্য-শক্তি ও উন্নয়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বলা চলে এটা আমাদের জীবন সত্তার অস্তিত্ব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কৃষি উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জাতির পিতা কৃষকের কল্যাণে পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকদের খাজনা মওকুফ করে দিয়েছিলেন। তিনি উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করে কৃষিক্ষেত্রে সেচ ও অন্যান্য উন্নত বীজ, উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও নিরলস প্রচেষ্টায় দেশ ইতোমধ্যেই দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনের চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, ফল উৎপাদনে হার বিবেচনায় সপ্তম অবস্থানে, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরিত মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয়, অ্যাকোয়া কালচারে পঞ্চম, তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয়তম অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১৬৩ মিলিয়ন মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত কৃষিপণ্য রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ এখন প্রতি বছর ৩৪.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করে যা ১৯৭১ সালে ছিল মাত্র ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদন বিগত সাড়ে চার দশকে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে সর্বমোট ৪১৩.২৫ লাখ মেট্রিক টন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় এবং যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৩২৮.৯৫ লাখ মেট্রিক টন। শুধু খাদ্যশস্যই নয়, অন্যান্য শস্য উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ছিল ১০৩.১৭ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৫২.৬৮ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের ফসল আবাদের নিবিড়তা বৃদ্ধি পেয়ে ২১৫% হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ১৭৯%। এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র কৃষি ও গ্রামীণ তাৎপর্যপূর্ণ দেশ। অর্থনীতি প্রাথমিকভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। আমাদের জিডিপির প্রায় ১৪.২৩% কৃষি খাত থেকে আসে এবং এ খাতে মোট শ্রমশক্তির ৪১% নিয়োজিত রয়েছে। আমরা যদি শিল্পে উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে সেখানে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই। সেটা হলো অধিকাংশ দেশই কৃষিকে বুনিয়াদ করে শিল্পকে পরিচালিকাশক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। শিল্পের উন্নতির প্রথম অবস্থায় দেশগুলো কৃষিজাতদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল শিল্পগুলোর উন্নতি সাধন করে শিল্পোন্নত হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে চলছে। জাতীয় অর্থনীতির সাধারণ নীতি কার্যকর করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার কৃষি উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সেখানেও প্রযুক্তিগত কারণে কৃষি খাত বৈচিত্র্যপূর্ণ। এর মুখ্য কারণ হিসেবে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নগরায়ণের সুবিধাগুলো বাজারে প্রবেশ। সর্বোপরি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে সেখানে বৈপস্নবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বছর আগেও ৮০% লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। ক্রমেই শিল্পের উন্নতি হওয়ায় কৃষির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির সংখ্যা কমে ১৯০০ সালে ৩৭ জন, ১৯৪৪ সালে ২০ জন, ১৯৭০ সালে ১০ এবং বর্তমানে ২০১৭-তে ১.৩% উন্নীত হয়েছে। সেখানে কৃষি, খাদ্য এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলো ২০১৭ সালে মার্কিন ডলারের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১.০৫৩ ট্রিলিয়ন অবদান রেখেছিল, যা ৫.৪ শতাংশ ছিল। জিডিপির ক্ষেত্রে কৃষি খাতের সার্বিক অবদানের বড় কারণ ছিল কৃষি-বনায়ন, মাছচাষ এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রমে সেক্টরভিত্তিক উন্নয়ন সাধন। কষিজাতদ্রব্য উৎপাদনে চীন, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি প্রভৃতি দেশ বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। চীন একদিকে শীর্ষ উৎপাদনকারী অন্যদিকে আমদানিকারকও বটে। ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গড়হবঃধৎু ঋঁহফ, ডড়ৎষফ ঊপড়হড়সরপ ঙঁঃ খড়ড়শ, ঙপঃড়নবৎ, ২০১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী কৃষি খাত থেকে বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদন ৬.৪%। ২২৬টি দেশের মধ্যে নয়টি দেশে কৃষি খাত তাদের প্রভাবশালী ক্ষেত্র। এ তালিকায় চীন প্রথম, ভারত দ্বিতীয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় ব্রাজিল চতুর্থ ও ইন্দোনেশিয়া পঞ্চম স্থানে রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও শিল্পের কাঁচামাল নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ সেক্টর থেকে চীন জিডিপির ৮.৩%, ভারত ১৫.৪% ব্রাজিল ৬.২%, রাশিয়া ৪.৭% জাপান ১% এবং অস্ট্রেলিয়া ৩.৬% এবং কানাডা ১.৭% অর্জন করে চলেছে। কৃষির এই উন্নয়ন অভিযাত্রায় কৃষিবিষয়ক যাবতীয় তথ্য সংগ্রহে দেশে কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারির কোনো বিকল্প নেই। দেশে ক্রমাগত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। শ্রমের গ্রোত গ্রাম থেকে শহরমুখি হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে মানুষ ভূমির অনুপাত। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ ০.০৫ হেক্টর। দেশের ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমি, বর্ধিত জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রতিকূলতা মোকাবিলায় টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী ও লাগসই করতে সঠিক তথ্য প্রয়োজন। কেবল কৃষি শুমারির মাধ্যমে সমগ্র দেশের কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির মালিকানা, ভূমির ব্যবহার, কৃষির প্রকার, শস্যের ধরন, চাষ পদ্ধতি, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির সংখ্যা, মৎস্য খামার, কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবলের তথ্য পাওয়া যাবে। শুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেশের কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নকল্পে ব্যবহার করা হবে।
পৃথিবীর সব উন্নত দেশ তাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সত্ত্বেও প্রতি পাঁচ/দশ বছর পর পর কৃষি শুমারি পরিচালনা করে থাকে। কারণ কৃষি শুমারির মাধ্যমেই দেশের কৃষিবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য পাওয়া সম্ভব। পরিসংখ্যান আইন ২০১৩, জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র (ঘঝউঝ) এবং কৃষি ও গ্রামীণ পরিসংখ্যান কৌশলপত্র (ঝচঅজঝ) অনুযায়ী কৃষি শুমারি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ শুমারি পরিচালনা করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতি দশ বছর পর পর কৃষি শুমারি পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাঁচবার (১৯৬০, ১৯৭৭, ১৯৮৩-৮৪, ১৯৯৬, ও ২০০৮) কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ০৯ জুন ২০১৯ হতে সারা দেশে ৬ষ্ঠ কৃষি শুমারির গণনাকার্য শুরু হয়েছে এবং চলবে ২০ জুন /২০১৯ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশের শহর ও পল্লী এলাকায় শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) গাইডলাইন অনুযায়ী কৃষি শুমারি ২০১৯ পরিচালিত হচ্ছে। এবারের কৃষি শুমারিতে সর্বনিম্ন প্রশাসনিক এলাকাভিত্তিক মোট পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মহিষ ইত্যাদির সংখ্যা এবং খানার মৎস্য চাষ আহরণে নিয়োজিত কিনা এবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ কথা সত্য যে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণে টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। দেশের অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় কৃষি সেক্টর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সেচ ব্যবস্থাপনা, বীজ ব্যবস্থাপনা, ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ ও বিপণন প্রযুক্তির সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন দুর্যোগে কৃষকের পাশে থেকে সেবা প্রদান, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবছর কৃষি আবাদি জমি কমে গেলেও আধুনিক ও লাগসই কৃষি প্রযুক্তিগুলোর কার্যকরী ও সম্প্রসারণের ফলে দেশের প্রায় সতের কোটি মানুষের জীবন তরী রক্ষা হচ্ছে।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কৃষি খাত উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
এ লক্ষ্যেই তার সরকার কৃষি শুমারির মাধ্যমে শস্য, মৎস্য প্রাণিসম্পদসহ পোল্ট্রি সাব-সেক্টরে বড় পরিসরে পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে কৃষি খাতের কাঠামোগত পরিবর্তন এবং জমিচাষের প্রকার ও ফসল বৈচিত্র্যের পরিসংখ্যানসংক্রান্ত সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অতএব, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার নিমিত্ত প্রকৃতির অমোঘ সত্য রসায়ন ‘বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আর খাদ্যের জন্য কৃষি’ এ শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে গণনাকারীদের নিজে তথ্য দিই এবং অন্যকেও এ কাজে উৎসাহিত করি এবং চলমান কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি ২০১৯ কার্যক্রমকে সাফল্যমন্ডিত করি।