আশার আলো জেগেছে চা শিল্পে

17
Tea Pickers at Finlay Tea - Srimongal, Bangladesh

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
চা শিল্পে আবারও সুদিন ফিরেছে। ইতিহাসে এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। চা-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আবারও বিশ্ববাজার দখলে নিতে পারবে বাংলার চা।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি বাগানে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। গত বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়, যা চা শিল্পের জন্য সুখবর।
এর আগে দেড়শ বছরের চায়ের ইতিহাসে ২০১৬ সালে প্রথম সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। তবে এই উৎপাদনের ধারা ধরে রাখতে না পারায় ২০১৭ সালে চা উৎপাদন কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজিতে। জানা যায়, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সেই চা বিদেশে রপ্তানি হতো। দেশের রপ্তানিপণ্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল চা।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলার চায়ের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। কিন্তু একসময় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশের চা। শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে শুরু করে রপ্তানির পরিমাণ। এরই ধারাবাহিতকায় ২০১৫ সালে চা রপ্তানি হয়েছে মাত্র দশমিক ৪৯ মিলিয়ন কেজি। আর চা শিল্পকে এখান থেকে টেনে তুলে আবারও বিশ্ববাজারে হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালেই মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার।
‘চা শিল্পের উন্নয়নে পথনকশা’ নামে একটি কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছিল। ১৫ বছর মেয়াদি এই পথনকশায় চায়ের উৎপাদন ১৩২ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে কমপক্ষে ২৫ হাজার মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে এমন টার্গেট ধরে রাখা হয়। চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ২০১২ সালে হয়েছিল ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে।
বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন নবম স্থানে আছে। ২০১৭ সালে ছিল দশম স্থানে। আর ২০১৫ সালে ছিল ১২তম স্থানে। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করায় গত তিন বছরে দেশে গড়ে বছরে ১২ হাজার মিলিয়ন কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘বাগানমালিকরা এখন পুরনো চা গাছ তুলে নতুন চারা লাগাচ্ছেন।
একইভাবে নতুন করে বাগানের পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে, যে কারণে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। তিনি বলেন, গত শতকের সত্তরের দশকে দেশে চায়ের উৎপাদন হতো ৩০ মিলিয়ন কেজি। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন কেজি। তখন চা রপ্তানি করা যেত। আর এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৮৫ মিলিয়ন, আর উৎপাদন হচ্ছে ৮২ মিলিয়ন। তা হলে রপ্তানি করব কীভাবে। চা-বাগানের মালিকরা জানান, চা শিল্পে আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই আমরা আবার বিদেশে চা রপ্তানি করতে পারব।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ বলেন, ‘ওই পথ নকশার পথ ধরেই চা শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। পথনকশা না করলে এ বছর আমাদের উৎপাদন থাকতো ৬৫ মিলিয়ন কেজি।’ তিনি বলেন, ‘বাগানমালিকরা এখন চায়ের প্লানটেশন বাড়াচ্ছেন। বিশেষ করে পঞ্চগড়ের দিকে চায়ের প্লানটেশন অনেক বেশি হয়েছে।’