উপজেলা নির্বাচন ॥ দক্ষিণ সুরমায় লড়াই হবে আওয়ামীলীগ-আওয়ামীলীগে

30

আসন্ন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। শেষ সময়ে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় ভোটাররা আগের মত তেমন সাড়া দিচ্ছেন না বলে অনেক প্রার্থীই জানান। সৃষ্টি হয়নি আগের সেই নির্বাচনী উত্তাপ। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অতীতের মত তৎপরতা ও আগ্রহ নেই। তারপরও থেমে নেই প্রার্থীদের প্রচারণা ও গণসংযোগ। সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী জনপথ দক্ষিণ সুরমায় ভোটাররা বেশ সচেতন। তারা প্রয়োগ করতে চান তাদের মৌলিক ভোটাধিকার। যদিও কেউ কেউ অভিযোগ করেন নির্বাচন শেষে আর প্রার্থীদের দেখা মেলে না। নির্বাচনী এলাকায় মিছিল শোডাউন করছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন প্রান্তে হাটবাজারে গিয়ে চাইছেন ভোট। উন্নয়নে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। পিছিয়ে নেই নারী প্রার্থীরাও।
আগামী ১৮ মার্চের নির্বাচনে এ উপজেলায় তিনজন চেয়ারম্যান, ৭ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ, নৌকা প্রতীকে, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট সালিশী ব্যক্তিত্ব আলহাজ¦ ময়নুল ইসলাম আনারস প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান শোয়েব মোটর সাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোঃ ইমাদ উদ্দিন নাসিরী (তালা), নন্দন চন্দ্র পাল (টিউবওয়েল), মাহবুবুর রহমান (মাইক), বুরহান উদ্দিন নোমান (বৈদ্যুতিক বাল্ব), সামছুল আলম (চশমা), সুন্দর আলী (টিয়াপাখি) ও শামীম কবির (বই প্রতীক) পেয়েছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা পান্না (বৈদ্যুতিক পাখা), সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বেগম (হাঁস) ও আইরিন রহমান কলি (ফুটবল) প্রতীক পেয়েছেন।
উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, লোকসমাগম হয় এমন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার টাঙানো হয়েছে। কোন কোন এলাকায় কোন প্রার্থীরই পোস্টার ব্যানার নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রাম্য হাট-বাজারগুলোতেও নির্বাচনী আলোচনা-সমালোচনা নেই।
বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ আবু জাহিদের নৌকা প্রতীকের বিপরীতে থাকা অন্য প্রার্থী অনেকটাই এগিয়ে। ভোটের আগের ভোটেই অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ¦ মইনুল ইসলাম। শক্তিশালী প্রার্থী মোহাম্মদ আবু জাহিদ ও আলহাজ¦ মইনুল ইসলাম এর সাথে ভোটের মাঠে টক্কর দিতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান শোয়েব। তিনি মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকার তরুণ সমাজ তাকে নিয়ে বিজয়রে স্বপ্ন দেখছেন। তাদের ধারণা আওয়ামীলীগের প্রার্থী শক্তিশালী প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত শোয়েবই নিরবে ভোট বিপ্লব ঘটাবেন। তবে শেষ সময়ে নৌকার পক্ষে সর্বদলীয় সভা শুরু হয়েছে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সর্বদলীয় ভোটে আবু জাহিদ নির্বাচিত হবেন এমনটাই তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীদের ধারণা।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করছেন উন্নয়নের জন্য ভোটারগণ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবু জাহিদ এর সাথে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মতবিরোধ থাকার ফলে আওয়ামীলীগের একটি অংশ অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মইনুল ইসলামকে উন্নয়নের জন্য বেছে নেবে ভোটাররা। সাধারণ মানুষ বিগত সময়ে ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থী আবু জাহিদকে বিজয়ী করলেও গোটা উপজেলাবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এবার আর অতীতের মত ভুল করবে না। বিগত সময়ের ভুলকে সুধরাতে ও উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এবার নতুন প্রার্থীকে ভোট দেবে জনগণ।
উত্তাপহীন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা বলেন, চেয়ারম্যান পদের ভোটে আমেজ না থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও নারী পদের প্রার্থীদের নিয়ে কিছুটা উৎসাহ রয়েছে। এলাকার টান, দলীয় ও গ্র“পিংয়ের প্রভাব পড়বে ভাইস চেয়ারম্যান পদের ভোটে। শেষ পর্যন্ত নানা হিসেব মিলিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা পদে ভোট দিতে ভোটাররা তৎপর হতে পারেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক গণসংযোগ করে ভোটারদেরকে পক্ষে আনতে কৌশলী অবস্থানে আছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদের ভোটে শেষ পর্যন্ত আনারস ও মোটর সাইকেল প্রতীকের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের ধারনা।
সিলাম এলাকার ভোটার নূর মিয়া বলেন, আগের মত এখন আর ভোটের উৎসব নেই। চেয়ারম্যান পদে শক্তিশালী কয়েকজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠে। চেয়ারম্যান পদে নৌকার বিপরীতে দু’জন শক্তিশালী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা নতুন প্রার্থীকে বেছে নিবে।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোহাম্মদ আবু জাহিদ, জামায়াত প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ ও বিএনপি প্রার্থী আলী আহমদ ভোটের মাঠে থাকায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছিলো। কিন্তু এবার সেরকম পরিবেশ নেই। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও জামায়াত প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ নির্বাচনে অংশ নেননি।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভোটার ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৯ হাজার ৭৮৫ ও মহিলা ভোটার ৮৩ হাজার ৪৭৮ জন। ১০ ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র ৭৮টি। বুথ ৩৭৮টি।
আগামী ১৮ মার্চের ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তবে উন্নয়নের স্বার্থে শেষ মুহূর্তে নৌকার পরিবর্তে আনারস কিংবা মোটর সাইকেলকে বেছে নিবে ভোটারগণ এমন আভাস পাওয়া গেছে উপজেলার সর্বত্র ঘুরে। (খবর সংবাদদাতার)