বিমান ছিনতাইয়ের কোন ক্লু এখনও পাওয়া যায়নি ॥ শাহজালাল সহ সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

55

কাজিরকাজার ডেস্ক :
বিমানের ভেতর কমান্ডো হামলায় নিহত পলাশ আহমেদ মাহদী কেন বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছিল এখনও সে ক্লু পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন- তাদের কাছ থেকেও এ ঘটনার মোটিভ জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও কঠোরভাবে জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সিভিল এভিয়েশানের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে পুরো ঘটনার আদ্যন্ত ব্রিফ করার পর এ নির্দেশ প্রদান করা হয়। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রুটে টিকেট কাটার সময় যাত্রীদের ফটো আইডি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করাসহ ব্যাগেজ লাগেজ আরও ভালভাবে স্ক্যান করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। এ ছাড়া নিহত যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া খেলনা পিস্তলটি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে পতেঙ্গা থানায় তা হস্তান্তর করা হয়। একই দিন সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জের নিজ বাড়িতে পলাশ আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সোমবার রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন নিহত পলাশের বাবা। এ সময় সব প্রক্রিয়া শেষে তার লাশ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়।
জানা গেছে- মঙ্গলবার সকালে সিভিল এভিয়েশানের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান, মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হাজির হন। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে তারা সেদিনের ঘটনার আদ্যন্ত ব্রিফ করেন। এ সময় ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শনের মাধ্যমে সেদিন কিভাবে পলাশ আহমেদ মাহাদী শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর অতিক্রম করেন তা উপস্থাপন করেন। তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ধরনের ত্রুটি যে ছিল না সেটা ভাল করেই উপস্থাপন করা হয়। এতে উপস্থিত সবাই কনভিন্সড হলেও শাহজালালসহ দেশের সবগুলো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও যুগোপযোগী ও নিশ্চিদ্র করার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের ফটো আইডি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করাসহ বেশকিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এদিকে ঘটনার তৃতীয় দিনে গতকাল হজরত শাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়- আগের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ কড়াকড়ি। বিমানবন্দরের কনফারেন্স কক্ষে এদিনও তদন্ত কমিটি ওইদিন অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে দায়িত্বপালনকারী বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের জবানবন্দী রেকর্ড করেছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সেদিন দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মীদের একজন প্রশ্ন রাখেন- যেভাবে মাহদীর ব্যাগ ও দেহ তল্লাশি করা হয়েছে- তার বেশি আর কি করার ছিল তা তাদের জানা নেই। তদন্তকারীরাও এ প্রশ্নের পাল্টা কোন প্রশ্ন করার উপায় খুঁজে পাননি। জবানবন্দী প্রদানকারীদের কাছেও বিস্ময় ঠেকেছে-পলাশ আহমেদ মেহেদী নিরাপত্তার সবস্তর ডিঙ্গিয়ে কিভাবে খেলনা পিস্তল নিয়ে উড়োজাহাজে পৌঁছল। এর চেয়ে আর বেশি কড়াকড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর কি নেয়া হতে পারে সেটা খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
দেশের অভ্যন্তরে প্রথমবারের মতো এ ধরনের বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করার ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবারও ব্যাপক আলোচনা ও কৌতূহলী প্রশ্ন ওঠতে দেখা যায়। বিমানের একজন পরিচালক জানান, বিমান ছিনতাইয়ের মতো সে ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি তো পলাশের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। তারপরও কেন তার কাছে মনে হয়েছে যে, এ ধরনের অস্ত্র দিয়ে বিমান ছিনতাই করা হুমকি দেয়া বা ছিনতাই করে সে পার পেয়ে যাবে।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার একজন কর্মকর্তা জানান- ওটা খেলনা পিস্তল। এ দিয়ে সামান্য ভয়ভীতি ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। তারপরও কেন মাহদীর মাথায় এমন চিন্তা আসলো সে হিসেব মিলানো যাচ্ছে না। গভীর তদন্ত ছাড়া এ প্রশ্নের সমাধান সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন- মাহদীর কাছে যে পিস্তল ছিল সেটা খেলনা। তার শরীরে বোমা বাধা ছিল বলে সে কথা রটেছিল সেটাও ছিল ভুয়া। আসলে সে প্লাস্টিকের পানির পাইপ ছোট ছোট করে কেটে কয়েক টুকরো বুকে বেধে রেখেছিল গুনা তার দিয়ে। তার সঙ্গে নিজের হাতঘড়ির ফিতা ছিড়ে বেধে রেখেছিল যাতে মনে হতে পারে এটা টাইম বোমা।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টা ও পরবর্তী চিত্র নিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সোমবার গভীর রাতে পতেঙ্গা থানায় ছিনতাই প্রচেষ্টার নায়ক পলাশ আহমদ ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ও আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরণ, ভয়ভীতি সংক্রান্ত আইনে একটি মামলা করেছে। সিএমপি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে (সিপিইউ)। এদিকে, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের গঠিত টিমের তদন্ত কাজ অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে, বিমান ছিনতাইয়ের অপনায়ক পলাশ আহমদ (২৮) এর লাশ সোমবার গভীর রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার গ্রামের বাড়ি এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। লাশ গ্রহণের আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত পলাশের চাচা দীন ইসলাম বিমান ছিনতাই ঘটনার রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত উৎপল বড়ুয়া জানিয়েছেন, মামলাটি করেছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ এ সংক্রান্ত এজাহারে বলা হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ছিলেন।