দেশের ঔষধ শিল্পের বিকশিত হোক

50

২৮ বছর ধরে বাংলাদেশে প্রতিবছর যে তিন হাজার কোটি টাকার টিকা আমদানি করা হয় তার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ আছে। গত ১৯ জানুয়ারি এই জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের প্রস্তুতি নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুসারে সারা দেশে এই ক্যাম্পেইনের আওতায় দুই কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য আগেই ওই ক্যাপসুল সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু এর দুই দিন আগে হঠাৎ করেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের মানগত সমস্যা দেখা দেওয়ার খবর আসে। ক্যাপসুলগুলো গায়ে গায়ে লেগে আঠালো হয়ে যাওয়ার খবর পায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিস্থিতির মুখে ওই দফা কর্মসূচি বাতিল করে ওই ওষুধ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ওই ওষুধ একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরে ওই ওষুধ এই কর্মসূচি থেকে বাতিল করে দেশীয় ওষুধ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত শনিবার এক বছর থেকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের পূর্ণাঙ্গ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন পালিত হলো। আর এবারই প্রথম দেশীয় ওষুধ ব্যবহার করা হলো এই ক্যাম্পেইনে। এদিন বাংলাদেশে উৎপাদিত এক কোটি ৯৫ লাখ লাল রঙের ক্যাপসুল শিশুদের মুখে তুলে দেওয়া হয়। ওষুধ সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। শনিবার সম্পন্ন হওয়া এ ক্যাম্পেইন থেকে দেশীয় এই ওষুধ নিয়ে কোনো নেতিবাচক খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া একই দিনের ক্যাম্পেইনের আরেক অংশের অনূর্ধ্ব এক বছর বয়সের শিশুদের খাওয়ানো ক্যাপসুলের ৭৫ শতাংশ ক্যাপসুল সংগ্রহ করা হয়েছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে, বাকিটুকু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের।
বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের জন্য এ এক নতুন প্রাপ্তি বলা যেতে পারে। ওষুধশিল্পে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশে তৈরি ওষুধ এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিকাশমান এই শিল্পের স্থানীয় বাজারও বিস্তৃত হয়েছে। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। নতুন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে দেশের ওষুধশিল্প। ওষুধের ক্ষেত্রে একসময় বাংলাদেশকে নির্ভর করতে হতো আমদানি করা ওষুধের ওপর। কিন্তু দিন বদলে গেছে। জীবন রক্ষাকারী অনেক মূল্যবান ওষুধ এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশের ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আবার দেশের বাজারে ওষুধের দামও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কম। এ ক্ষেত্রে আমরা আশার আলো দেখতে পারি। দেশের ওষুধশিল্পের বিকাশে সরকার যেমন উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে, তেমনি জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গভীর যতেœর সঙ্গে দেখা দরকার। দেশে তৈরি ওষুধ আন্তর্জাতিক মানের হলে বিদেশি ওষুধের ওপর থেকে নির্ভরতা কমবে। আমরা আশা করব, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনের মধ্য দিয়ে যে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। বিকশিত হবে দেশের ওষুধশিল্প।