পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ॥ কোন নিরীহ মানুষ যেন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হয়

79
পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদান ও সেবামূলক কাজের জন্য ৩৪৯ জন পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রাপ্তদের পদক পড়িয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্ব দরবারে রোলমডেল। সন্ত্রাস দমন, জঙ্গি নির্মূল ও মাদক নিয়ন্ত্রণে চলমান ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। জনগণকে হয়রানি করা যাবে না। জনগণ যেন পুলিশের কাছ থেকে হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাই বললেন। সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী জাতিসংঘে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং রাখছে। এমন অবদান অব্যাহত রাখতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এ জন্য পুলিশের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সারাদেশে ৩০টি ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছে। আমরা পুলিশের প্রশিক্ষণ ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা যেন আরও বৃদ্ধি পায় এজন্য ধারাবাহিক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। তাই তাদের বিরাট অভিজ্ঞতা আছে। বাংলার আনাচে-কানাচে শান্তি নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। তাহলে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, পুলিশ সদস্যের পরিবারেও শান্তি বজায় থাকবে।
কোন নিরীহ মানুষ যেন পুলিশ কর্তৃক হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার না হয়। তা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। কারণ জনগণের নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সেবার মাধ্যমে দেশের জনগণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে আস্থা বাড়াতে হবে। পুলিশকে জনবান্ধব হয়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু তা পুলিশকেই সেবা দিয়ে, কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক। বাংলাদেশ পুলিশকে অবশ্যই জনবান্ধব হতে হবে। পুলিশের ওপর জনগণ যেন আস্থা রাখতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে পুলিশকে প্রতিটি কাজ করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। এজন্য পুলিশকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
পুলিশকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা দেশের উন্নয়ন করতে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একান্তই জরুরী। তাই মাদক, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দমন করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ একজন সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। সন্ত্রাসীর কোন ধর্ম নাই, বর্ণ নাই, দেশও নাই, কিছুই নাই। কাজেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে পুলিশকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
পুলিশকে বহুমুখীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে সর্বক্ষেত্রে মানুষ সুবিধা পায়। এজন্য নতুন নতুন বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্যই নতুন থানা, রেঞ্জ, র‌্যাব কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হবে তাদের পরিবারকে ৮ লাখ টাকা আর যারা আহত হবেন তাদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা করে দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তা পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্কুল পর্যায় থেকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে বর্তমান সরকার যে ভূমিকা নিয়েছে, সেটা পালন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে অনেক সময়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগও হয়। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই দুর্যোগের সময় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। কঠোর হাতে সে অবস্থা মোকাবেলা করেছিল। পুলিশ সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসীদের হাতে জীবন দিয়েছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দশ বছরে পুলিশ বাহিনীতে ৯১ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পদোন্নতি জটিলতা দূর করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে তাকে সালাম জানানো হয়। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্যারেডের অনুমতি প্রার্থনা করেন। পুলিশের বিভিন্ন দল প্যারেড করে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পৌঁছলে এক দল পুলিশ সদস্য তাকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও ঘোড়ায় চড়ে অভিবাদন জানিয়ে মঞ্চ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে বার্ষিক কুচকাওয়াজে সালামগ্রহণ, বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সদস্যদের পদক বিতরণ, নারী পুলিশ কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেড ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।