আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

145

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘একুশের গান’ কবিতার শেষ লাইনগুলো ‘আমার শহীদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে/ জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে/ দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি/ একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি…..।’ ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে জোরালো দাবি তুলেছিল সর্বপ্রথম তমদ্দুন মজলিস। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি’। এই কমিটির সিদ্ধান্তেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়েছিল।
আবুল কাসেম রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে তার এক লেখায় বলেন, ইংরেজরা এক সময় জোর করে আমাদের ঘাড়ে ইংরেজী ভাষা চাপিয়ে দিয়েছিল। সেইভাবে কেবল উর্দু অথবা বাংলাকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র করলে পূর্বের সেই সাম্রাজ্যবাদী অযৌক্তিক নীতিরই অনুসরণ করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, কোন কোন মহলে সেই প্রচেষ্টা চলছে এবং তাকে প্রতিহত করার জন্যে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। সর্বশেষে তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে তিনি দাবি করেন, ‘লাহোর প্রস্তাবেও পাকিস্তানের প্রত্যেক ইউনিটকে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অধিকার দেয়া হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক ইউনিটকে তাদের স্ব স্ব প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নির্ধারণ করবার স্বাধীনতা দিতে হবে।
১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিসের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এমনকি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচয়িতা বশীর আল হেলালও যখন লেখেন ‘তমদ্দুন মজলিসের প্রাথমিক উদ্যোগই ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন বিশেষ গতি লাভ করেছিল।’ তখন বুঝতে কষ্ট হয় না উল্লেখিত চিন্তার শিকড় কতদূর বিস্তার লাভ করেছে। এর প্রমাণ গত তিন চার বছর বিভিন্ন মাধ্যমে তমদ্দুনপন্থীরা বলতে শুরু করেছেন যে ‘তারাই ভাষা আন্দোলনের জনক’।
১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচী সফল করে তোলার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এবং যুবলীগের কর্মীরা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এদের ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপনায় সাড়া দেন ঢাকার প্রতিটি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রদের ওই সভা থেকে সারাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, ছাত্রধর্মঘট ও মিছিলসহ আইন পরিষদ ঘেরাও-এর প্রস্তাব করা হয়। কারণ ওই দিন পূর্ববঙ্গে আইন পরিষদের অধিবেশন চলার কথা ছিল।
পাকিস্তানীরা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল বাংলাকে। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার আজ বড় নাজুক দশা। আমরা খুব অবহেলা করেই ভুলতে বসছি সেই প্রিয় বাংলাকে। একুশে ফেব্রুয়ারির সব আবেদন ও ভাবনা যখন একদিনের আয়োাজনে সীমিত হয়ে আছে। সারা বছর ধরে অশুদ্ধ বাংলা বলার উৎসব হবে তা আর বিচিত্র কি? কেন আমরা বেরিয়ে আসতে পারি না সাজানো এই গণ্ডি থেকে। ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরেও বাংলা নাটক সিনেমাসহ শিল্প সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে বাংলা ভাষার অপব্যবহার হচ্ছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের সূচনা, বুকের রক্ত ঢেলে জাতিকে রুখে দাঁড়াবার সাহসে উজ্জীবিত করেছিল যারা, সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালিত হবে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মধ্যে সীমিত থাকেনি, ভাষাভিত্তিক চেতনায় জাতি ক্রমে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের শিকল ছিঁড়ে মুক্তিকামী মানুষ একুশের চেতনার পথ ধরেই একাত্তরে রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। আজ বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি দেশ- একটি পতাকা রয়েছে। অর্ধশতক বয়সী এই দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। একটি বিশ্বের উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে।