ইজতেমা নিয়ে বিরোধের অবসান, আসছেন না মাওলানা সাদ

71

কাজিরবাজার ডেস্ক :
টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের অবসান হয়েছে। আগামী মাসে ইজতেমা করতে একমত হয়েছে বিবদমান দুই পক্ষ। আর এতে যোগ দেবেন না দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি, যাকে নিয়ে মূল বিতর্কের সৃষ্টি।
বুধবার সচিবালয়ে তাবলিগের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পর এই কথা নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তারা জানান, আজ আরেকটি বৈঠকে ইজতেমার সময়সূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তাবলিগের বিরোধ মীমাংসা হয়েছে, এখন আর কোনো বিরোধ নেই। ফেব্রুয়ারি মাসে একসঙ্গে ইজতেমা হবে। বৃহস্পতিবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দুই পক্ষের দুইজন প্রতিনিধি বসে ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করবেন।
বৈঠকে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মধ্যে তাবলিগের শুরা সদস্য ওয়াসেফুল ইসলাম এবং দেওবন্দপন্থিদের মধ্যে শুরা সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় দুই পক্ষের মুরব্বিদের কোলাকুলি ও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।
বিরোধ মীমাংসায় সমন্বয়কারীর ভূমিকায় থাকা কারওয়ানবাজার আম্বরশাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে, একবারেই ইজতেমা হবে। তাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা মিটমাট হযে গেছে। এখন আর বিরোধ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দিল্লির মাওলানা সাদ এবার আর ইজতেমায় যোগ দিতে আসছেন না। বৈঠকে সেরকম সিদ্ধান্তই হয়েছে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইজতেমা দুই দফায় হবে নাকি একবারেই সম্পন্ন হবে সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত হবে।
নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইজতেমা ঘিরে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। তাবলিগের দুই পক্ষকে এক করা হয়েছে। তারা এক হয়ে এবার ইজতেমা আয়োজন করবে।’
বৈঠক শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষ ও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ এবং ইজতেমা নিয়ে রিট করার বিষয়টি তাদের কলঙ্কিত করেছে। তাবলিগ সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে আঘাত করেছে। রিট করার বিষয়টি দেশে-বিদেশে সমালোচিতও হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণে আজকের বৈঠক ছিল। (বৃহস্পতিবার) ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বসে উভয় পক্ষ ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করবে।’
তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরোধের শুরুটা বছরদুয়েক আগে। দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে। তাকে কেন্দ্র করে তাবলিগ সংশ্লিষ্টরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। গত বছর ইজতেমায় মাওলানা সাদ এলেও বিরোধী পক্ষের বিক্ষোভের কারণে তিনি মাঠে যেতে পারেননি। গত ১ ডিসেম্বর এবারের ইজতেমার আয়োজনকে কেন্দ্র করে টঙ্গীর মাঠে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
প্রতি বছর জানুয়ারির শুরুতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও এবার জাতীয় নির্বাচন এবং নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে তা পিছিয়ে যায়। নতুনভাবে যাত্রা শুরুর পর সরকার এই বিরোধ মেটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই পক্ষকে একটেবিলে বসিয়ে বিরোধ মীমাংসায় সরকার অনেকটা সফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। :