গোলাপগঞ্জে শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে ভিক্ষা বৃত্তিতে

64
গোলাপগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের সামনে ভিক্ষা করার সময় তিন শিশুকে ক্যামেরাবন্দী করা হয়।

সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। কারণ, আজকে যে শিশু, সেই আগামীতে অভিভাবক, সব কর্মের কর্ণধার। যে বয়সে হাতে থাকবে বই, খাতা, কলম। বাকি সময় কাটবে সহ-পাটিদের সাথে দৌড় ঝাঁপ আর খেলা ধুলা করে। খাবে মায়ের হাতে দুধ ভাত। সেই বয়সে ফুটফুটে ৩টি শিশু দু’মুঠো অন্ন জোগাতে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরছে। তাদের বাবা একজনই। শারমিন বেগম (১০), তারমিন বেগম (৮) ও রাসেল আহমদ (৩)। গোলাপগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেই দেখা মিলে তাদের। তারা প্রায় ৩ বছর থেকেই মায়ের চিকিৎসার টাকা আর দু’মুঠো অন্ন জোগাতে ভিক্ষা করছে। তাদের পিতার বাড়ী সিলেটের লালাবাজারে। অনেকদিন আগেই তাদের মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে বাবা জহির উদ্দিন। এরপর থেকেই তাদের মা রুমি বেগম মইনুদ্দিন আহমদ (১২), আল-আমিন (৬) ও রখন আহমদ (৪)সহ তাদের ৬ ভাই বোনকে নিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের সড়কবাজার মাজরগ্রামে পিত্রালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নানার নাম ফরিদ উদ্দিন। কয়েক বছর আগেই তাদের নানাও মারা যান। গতকাল শুক্রবার (১১ জানুয়ারী) জুম্মার নামাজের সময় গোলাপগঞ্জ বাজারে দেখা মিলে তাদের। এ সময় তারা ৬ ভাই বোনের মধ্যে ৩জন ওই মসজিদে আসা মুসল্লিদের কাছে ভিক্ষা চাইতে আসছিল। এ সময় ১০ বছর বয়সী শিশু শারমিন বেগমের সাথে আলাপ করা হলে সে জানায়, মায়ের চিকিৎসার টাকা ও দু’মুঠো অন্ন জোগাতে ভিক্ষা করছি। খারাপ বাবা আমাদের মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এপর থেকেই আমরা সকল ভাই বোন ভিক্ষা করছি। সে জানায় ৬ ভাই বোন প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে দুই গ্র“পে বেরিয়ে পড়ি। ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মত কামাই হয়। আবার রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বাড়ি চলে যাই। টাকাগুলো আমাদের মায়ের কাছে নিয়ে দেই। মায়ে এক পা-খারাপ হাটতে পারেন না। শারমিনের ছোট বোন তারমিনের সাথে আলাপ করা হলে ছোট্ট শিশুটি বলে পড়া লেখা করলে খাবো কি?আব্বায় আমরারে ফালাইয়া গেছইনগি। এসময় তাদেরকে আরো প্রশ্ন করতে চাইলে তারা বলে টাকা দিলে সবকিছু বলবো। ওই প্রতিবেদক টাকা দিতে রাজি হওয়াতে তারা তাদের সকল দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে।
গোলাপগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের মুতাওয়াল্লি হাজী আব্দুল কাদির বলেন,ওই ৩/৪টি শিশুকে বিভিন্ন নামাজের ওয়াক্তে দেখা যায়। তাদের ভাগ্য খারাপ হওয়ায় তারা পড়ার বদলে ভিক্ষা করছে। দেখে খুবই কষ্ট লাগে। ফারুক আহমদ (৬০) নামে ওই মসজিদে আসা এক মুসল্লি বলেন তাদের সব সময় বিভিন্ন সমজিদে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের সহযোগিতায় সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ওই ৬টি শিশু ছাড়াও উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ^র ও হেতিমগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায়ই এ রকম শিশুদের ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন গাড়ির স্ট্যান্ড ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা মিলে তাদের।
এসব অসহায় শিশুদের অন্ধকার থেকে শিক্ষার আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে সচেতন মহলের দাবি।