২০১৮ : সড়কে মৃত্যুর মিছিল ॥ গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০টি তাজা প্রাণ ঝরে

44

সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
সড়ক দুর্ঘটনা যেন এক অভিশাপের নাম। প্রতিদিনই দেশের সড়ক-মহাসড়কে ঝরে পড়ছে মানুষের প্রাণ। আহতের সংখ্যা তার চেয়ে আরও বেশি। যাদের অনেককে সারা জীবন পঙ্গু হয়ে থাকতে হবে। যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, তাকে এখন আর স্বাভাবিক বলা যায় না। এ দুর্ঘটনাকে ‘হত্যাকান্ড’ হিসেবে সচেতন ও সুশীল নাগরিকরা অনেক আগেই চি‎িহ্নত করেছেন। একের পর এক কেড়ে নিচ্ছে কর্মজীবী মানুষের প্রাণ।
২০১৮ সালে গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০টিও বেশি প্রাণ ঝরে। ১০জনের মধ্যে ছিলেন আপন দুই ভাই, সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, প্রবাস যাত্রী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন কর্মজীবী মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া দুটি পরিবারের দুই ভাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। সিএনজি চালক সুরুজ আলী (৩৮) ও ছোট ভাই তরমুজ আলী (৪০)। তাদের মৃত্যুতে দুটি পরিবার সমস্যার সাগরের হাবুডুবু খাচ্ছে। ঘাতক ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোন সুফল পায়নি এ দুটি পরিবার।
৩১ জানুয়ারী : মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আব্দুল মালিক পটল (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। ওই কৃষক উপজেলার আমুড়া ইউপির শিলঘাট লম্বাগাঁও গ্রামের মৃত আব্বাছ উদ্দিনের ছেলে। ঘটনা ঘটে ২৭ জানুয়ারী রাত ৮টায় উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির রায়গড় বড়গুল নামক স্থানে। ওই কৃষক স্থানীয় একটি বাজার থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ী ফিরছিলেন। এমন সময় মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত গতিতে আসা আব্দুস শহিদ নিহত পটলকে ধাক্কা দেন।
২৯ এপ্রিল : গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউপির কায়স্তগ্রাম নাশাগঞ্জ নামক স্থানে বাসের ধাক্কায় রানাপিং চন্দনভাগ গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ (৩২) নামে একজন নিহত ও সিএনজি চালকসহ চারজন আহত হন। পরবর্তীতে সিএনজির চার যাত্রীদের মধ্যে একজন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মারা যান। নিহত ওয়াদুদ সিলেট ওসমানী হাসপাতালে অসুস্থ স্ত্রীর খাবার দিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন।
১৯ মে : রাস্তা পারা পারের সময় কার-সিএনজি অটোরিক্সার সংঘর্ষে প্রাণ ঝরে তাজিনা আক্তার এমি (১৮) নামে এক এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীর। সে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউপির কায়স্থগ্রামের কৃষক জুরু মিয়ার প্রথম কন্যা। ওই শিক্ষার্থী ফুলবাড়ী বরায়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কলেজ জীবনের যাত্রা শুরু হয়নি এমির।
৪ জুলাই : সিএনজি ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে সোহেল আহমদ (৩৫) নামে গোলাপগঞ্জের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ওই মাসেই সৌদিতে যাওয়ার কথা ছিল তার। ঘটনাটি ওইদিন ১০টায় সিলেট-তামাবিল রোডের জৈন্তাপুর ডিগ্রী কলেজের সামনে ঘটে। নিহত সোহেল গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউপির হাজীপুর ঘনশ্যাম গ্রামের মৃত আব্দুন নুরের পুত্র।
১৩ জুলাই : সড়ক দুর্ঘটনায় শিউলি আক্তার রিমা (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওই দিন গোলাপগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর জবান আলীর ছেলে জুম্মান আহমদ চাচাতো বোন রিমাকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। হেতিমগঞ্জ চৌমুনীতে পৌছা মাত্র ফুলকলীর সামনের একটি গর্তে পড়লে পিছন থেকে আসা ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৫৩৪৩ পাথর বোজাই ট্রাক মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে ট্রাকের পেছনের চাকার নিচে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
৮ আগষ্ট : গোলাপগঞ্জে ট্রাকের চাপায় সিএনজি চালসহ দুই ভাই ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের মৃত্যু হয়। ওই দিন সকাল ১০টায় উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ী ইউপির হেতিমগঞ্জ মোল্লাগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ঘোগারকুল গ্রামের মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে সিএনজি চালক সুরুজ আলী (৩৮) ও নিহতের আপন বড় ভাই গোলাপগঞ্জ ড্রীমল্যন্ড পার্কের কর্মচারী তরমুজ আলী (৪০)।
১৫ ডিসেম্বর : বাসের ধাক্কায় ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবি ছাত্র মালেক আহমদ (২০) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটে। সে ঘটনার দিন গোলাপগঞ্জ বাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পৌর চৌমুহনী থেকে (লকাল) সিএনজি যোগে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের পৌরসভার রাঙ্গাডর বাজারের পাশে যাত্রীবাহি ওই সিএনজিটি একটি নোহা গাড়ীকে অবারটেক করতে চাইলে বিপরিত দিক থেকে আসা গোলাপগঞ্জগামী বাস ওই সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় যাত্রিবাহী সিএনজিটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা চালকসহ ৪জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। রাত অনুমান ১০টায় মালেক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নিহত আব্দুল মালেক উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির ধারবহর গ্রামের ফয়েজ আহমদের ছেলে।
এছাড়া ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১০টিরও বেশি প্রাণ ঝরে। অনেকের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কেউ সারা জীবন পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। এসব দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামও করা হয়েছে।