আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ॥ জগন্নাথপুরে নিখোঁজ লন্ডন প্রবাসী’র কবর জৈন্তাপুরে শনাক্ত, লাশ উত্তোলনের আবেদন

25

জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুর- পৌর এলাকার নিখোঁজ লন্ডন প্রবাসী আব্দুল গফুরের কবর জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামটিলায় শনাক্ত করেছে থানা পুলিশ। ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহ ভাজন ৩জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল গফুর ২০১৭ সালে দেশে আসেন। সিলেট শহরের দরগা এলাকায় পরিচয় হয় জৈন্তাপুর উপজেলার সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের অফিস সহায়ক আবুল কালাম আজাদের সাথে। ২০১৭ সালের ৮ মে আবুল কালামের সাথে থাকা আব্দুল গফুর তার বন্ধু জগন্নাথপুর গ্রামের নূরুল হককে সিলেট শহরের দরগাহ মহল্লার রাজমনী হোটেলে দেখা করার অনুরোধ করে। পারিবারিক ব্যস্ততায় নূরুল হক দেখা করতে পারেন নাই। এর পর থেকে লন্ডন প্রবাসী আব্দুল গফুর নিখোঁজ হন। আত্মীয় স্বজনরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। অবশেষ তাকে না পেয়ে গফুরের ভাতিজা লালা মিয়া মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে জগন্নাথপুর থানার সাধারণ ডায়েরী করে। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে তদন্তে নামে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। গত ২৫ নভেম্বর রবিবার বিকেল ৪টার জৈন্তাপুর মডেল থানার পুলিশের সহায়তায় জগন্নাথপুর থানার এইআই হাবিবুর রহমান জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৩জন কে আটক করেন। আটককৃতরা হলে জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের অফিস সহায়ক সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর সদর ব্রাহ্মণগাওঁ উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত মর্তুজ আলীর ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৫২), তার জামাতা জৈন্তাপুর দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার( বিএসসি) শিক্ষক কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার দত্তের কান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে আনোয়ার হোসেন ( ৩০), জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট মোকামটিলা গ্রামের মো: ইদ্রিছ আলীর ছেলে মো: জুনাব আলী (৪২)। প্রাথমিক তদন্তে ও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদ্বয় ঘটনার কথা স্বীকার করে কিন্তু আটক জুনাব আলী এই ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি। এ সময় আসামীদ্বয় নিখোজ গফুরের লাশ মাটি চাপা দেয়ার স্থান পুলিশ কে দেখিয়ে দেয়। পুলিশ স্থানটি লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করে রাখে এবং পাহারাদার নিযুক্ত করে। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ সিলেট দরগা মহল্লাস্থ রাজমনী হোটেল হতে নিহত আব্দুল গফুরের ব্যাগ উদ্বার করে এবং আবুল কালামের মেয়ের জামাতার বাড়ি থেকে প্রবাসীর পাসপোর্ট উদ্ধার করেন। এ বিষয় জগন্নাথপুর থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, অন্তত ১৭ মাস পর এই হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং মুল ঘাতকদের আটক করতে সক্ষম হয়েছি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে টাকার লোভে প্রবাসী কে হত্যা করে লাশ জৈন্তাপুর উপজেলা মোকামটিলা এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে আমরা লাশ উত্তোলন করার ব্যবস্থা করব।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ খান মো: মাঈনুল জাকির বলেন, ঘটনার কারণ এবং মূল রহস্য উদঘাটন করতে জৈন্তাপুর ও জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। ইতোমধ্যে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা সহ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য জড়িতদের গ্রেফতার করার চেষ্ট অব্যাহত রয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হবে।