শোকের মাস আগষ্ট

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
“মুজিবুর রহমান/ ওই নাম যেন ভিসুভিয়াসের অগ্নি উগারী বান/ বঙ্গদেশের এ প্রান্ত হতে সকল প্রান্ত ছেয়ে/ জ্বালায় জ্বলিয়ে মহাকালানল ঝঞ্ঝা অশনি বেয়ে;/ বিগত দিনের যত অন্যায় অবিচার ভরা যা/ হৃদয়ে হৃদয়ে সঞ্চিত হয়ে সহ্যের অংগার/… তাই যেন বা প্রমূর্ত হয়ে জ্বলন্ত শিখা ধরি/ ওই নাম আজ অশনি দাপটে ফিরিছে ধরণী ভরি..।” প্রয়াত পল্লীকবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ নামক কবিতায় এমনিভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।
দেখতে দেখতে ৪৬টি বছর পেরিয়ে গেছে। রাত পোহালেই কাল সেই ভয়াল কালরাত, ১৫ আগষ্ট। জাতির সব হারানোর দিন। একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তার সব গুণ নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুবর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। এতকিছুর পরও শেষ পর্যন্ত তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকের হাতে।
৪৬ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়।
কিন্তু তাতে তো এমন একজন বাঙালি জাতির প্রাণপুরুষ ও ইতিহাসের মহানায়ককে একটি জাতির হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি ফিরে আসেন প্রতিটি উৎসবে, আনন্দ-বেদনায়। তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। কী অপরাধ ছিল বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের? কী অপরাধ ছিল ছোট শিশুপুত্র রাসেলের? বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
দিনটি তাই বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত। কাল সেই শোকের দিন, কান্নার দিন। জাতীয় শোক দিবসে আগামীকাল বাঙালি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় কাল পালিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী।
আগস্ট মানেই শোক, আগষ্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালির কান্নাভেজা পরম বেদনামুহূর্ত। আগষ্ট এলেই শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে বাঙালির মাথা। ডুকরে কেঁদে ওঠে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির হৃদয়। চারদিকে কেবলই গ্রোত নামে শোকস্তব্ধ মানুষের। মানুষ কাঁদে। বেদনায় গান গায়। নামে শোকের মিছিল। কালোয় কালোয়, শোকে শোকে বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে গোটা দেশ, দেশের মানুষ।
পিতাহীন দেশে সঙ্কটে উপনীত বাঙালি। তাই এখনও আশ্রয় খোঁজে তাঁরই আদর্শে রেখে যাওয়া কন্যা শেখ হাসিনার পরম ছায়ায়, ভালোবাসায়। মুক্তি মেলে মানুষের, তাঁরই স্বপ্নাকাশে। মানুষ যূথবদ্ধ হয়। সম্মিলিত শোক রূপ নেয় শক্তিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার নতুন শপথ নেয় বাঙালি।
কেননা, একটা জাতির মুক্তির জন্য জীবনের সুখ, স্বস্তি, আরাম, মোহ, অর্থকড়ি- সব ত্যাগ করার এক মহান মানুষ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। সাধারণ গরীব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে কীভাবে একজন মানুষ অবলীলায় বিসর্জন দিতে পারেন নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, তার কালজয়ী ইতিহাস রচে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের প্রথম বাঙালি যাঁর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য, বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অবয়বে। অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আগে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু এ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই তিনি বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জনক।
মহামারী করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পহেলা আগস্ট থেকে প্রতিদিনই অজগ্র সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতজ্ঞ চিত্তে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল ও অজগ্র সংগঠন জাতীয় শোক দিবস পালনে গ্রহণ করেছে বিস্তারিত কর্মসূচী। করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অজগ্র রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে জাতীয় শোক দিবসের বিস্তারিত কর্মসূচী।