ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি আওয়ামীলীগ ॥ নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ স্থান ও দিন-ক্ষণ পরে জানানো হবে

69

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির আহ্বান এতদিন নাকচ করে এলেও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এই সংলাপ হবে নিঃশর্তÑ উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তারা দেখাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার দরজা কারো জন্য বন্ধ করেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আলোচনায় বসতেই পারি। এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতামত জানতে চান। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়।
বিকেলে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ
সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, শেখ হাসিনার দরজা কারো জন্য বন্ধ হয় না, বন্ধ থাকে না। এর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতে পারছেন যে, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে সম্মত। আমরা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসব।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমাকেও একটা চিঠি দিয়েছেন। সেটা অবশ্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক দিয়েছেন। সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বরাবর অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের সঙ্গে সংলাপের প্রত্যাশায় তারা চিঠি দিয়েছে। যার সঙ্গে সাত দফা প্রস্তাব এবং ১১টি লক্ষ্য সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সংলাপ করতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা চাপের মুখে নতিস্বীকার করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কাউকে সংলাপে ডাকিনি। তবে তারা সংলাপে করতে চান। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপ বিষয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে চান না, তিনি (শেখ হাসিনা) সেকথা বলেছেন। এ খবরে রাজনীতির মাঠে শান্তির বাতাস বইবে বলে মনে করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের নিয়ে একটি অনির্ধারিত একটি বৈঠক করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। অনির্ধারিত এ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দরজা কারো জন্য বন্ধ নয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আমরা সংলাপে বসতে রাজি। আমরা এবং আমাদের নেত্রী ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংলাপে নেতৃত্ব দিবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। খুব শীঘ্রই আমরা সময়, স্থান ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তাদের জানিয়ে দিব। এটা অনতিবিলম্বে জানিয়ে দিব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ তফসিলের আগেই হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার অন্য দাবিগুলো মানা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, আলোচনা যখন হবে, আলোচনার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করেন।
সংলাপ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী : বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ড. কামাল হোসেনরা (ঐক্যফ্রন্ট) আলোচনার জন্য আবেদন করেছেন। আমরা আলোচনায় বসতেই পারি। কেউ যদি আলোচনায় বসতে চায়, তা হলে বসা উচিত। বিগত নির্বাচনের আগে আলোচনায় বাসার জন্য আমি নিজেই ফোন করেছিলাম। আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন তারা (বিএনপি) রাজি হয়নি। এখন ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট আলোচনায় বসতে চায়। আমরা কেন বসব না?
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসতে রাজি হলেও মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বলেন, আমরা আগে বলেছি, কোন আলোচনা হবে না। এখন আবার আলোচনা করব। এটা ভাল দেখাবে না। তবে অধিকাংশ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে আলোচনায় বসা উচিত বলে মত দেন। এ সময় প্রভাবশালী এক মন্ত্রী যারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আলোচনায় বসার পক্ষে মত দেন তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা তো বাতাস দেখে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী যদি আলোচনায় বসতে রাজি না হতেন, তাহলে আপনারাও তাই বলতেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, অধিকাংশ সদস্যই আলোচনার পক্ষে ছিলেন। তবে কয়েকজন আলোচনার বিপক্ষে মত দেন। তাদের যুক্তি ছিল, এতদিন আমরা কারো সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না, বলে এসেছি। তাহলে এখন কীভাবে আলোচনায় বসব? এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালে আলোচনার জন্য বিএনপিকে আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেটা গ্রহণ করেনি। এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিজ থেকে আলোচনার জন্য আমার কাছে সময় চেয়েছে। কেউ যদি আমার বাড়িতে আসতে চায় তাহলে আমি কীভাবে তাদের না করি। তিনি বলেন, আলোচনা তো বিএনপির সঙ্গে হচ্ছে না। আলোচনা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে।
বৈঠক বসেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা : আকস্মিক এক ঘোষণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংলাপে বসতে রাজি হওয়ার কথা জানানোর পর বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলন করার পর মতিঝিলে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের চেম্বারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে রয়েছেন জেএসডির আ স ম আবদুর রব ও আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও মোকাব্বির খান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও জাহেদুর রহমান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোঃ মনসুর ও আ ব ম মোস্তফা আমিন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীও এই বৈঠকে ছিলেন।