প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগে পুরুষের মতো নারীদেরও ন্যূনতম যোগ্যতা হবে স্নাতক ডিগ্রী

45

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এইচএসসি পাস করেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার দিন আর থাকছে না। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার সঙ্গে সঙ্গে এ স্তরে দক্ষ নারী শিক্ষক নিয়োগের জন্যও আসছে নতুন নিয়োগ বিধি। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পুরুষ প্রার্থীর মতো নারীদেরও আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা করা হচ্ছে স্নাতক ডিগ্রী। সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বাধ্যতামূলক হচ্ছে ২০ শতাংশ বিজ্ঞান শিক্ষক। এছাড়া দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় মানসম্মত, দৃষ্টিনন্দন করে তুলতেও নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। প্রথমে ঢাকা মহানগরের প্রতিষ্ঠানকে সাজানো হলেও পর্যায়ক্রমে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে দেশের ৬৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই নীতিমালার আলোকে নারী-পুরুষ সবারই শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হচ্ছে স্নাতক বা সমমান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের বিধিমালাটি সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত সপ্তাহে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করলে তাতে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, প্রস্তাবিত বিধিমালাটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগের বিধিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষ প্রার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল স্নাতক বা সমমান। আর নারীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল এইচএসসি বা সমমান। নতুন বিধিমালায় নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০ শতাংশ বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে নতুন বিধিমালায়। এছাড়া আগামী বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচ হাজার ১০৬ জন সঙ্গীত ও শরীরচর্চা বা ক্রীড়া বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেই বলছেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এখন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই বেশি আসছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। এখন আর শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আগেই এর পরিবর্তন দরকার ছিল জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি বা আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শিক্ষক পরীক্ষায় অবশ্য বর্তমান বিধিই কার্যকর থাকবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার ফলে এ স্তরে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ছাড়াও বিদেশী উন্নয়ন সংস্থাগুলোও তাগাদা দিয়ে আসছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত দুটি কারণে নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রভাবের বিষয়টি। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকের যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক হওয়া উচিত-একথা দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন বহুদিন ধরে। এটা না হলে তার পক্ষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কষ্টকর হয়ে পড়বে।
আরেকটি কারণ হচ্ছে, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি হওয়ার ঘটনা। প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। এ পদের জন্য কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রীধারী আবশ্যক বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতির হার কম হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিকে নিয়োগের যোগ্যতা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ রমজান আলী বলেন, বড় পরিবর্তন হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতায়। এখন আর আসলে এইচএসসি পাস এ নিয়োগে চলে না। তিনি আরও বলেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এখন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরাই বেশি আসছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। ফলে এখন আর শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি চলে না।