ভেজাল ড্রিংকস উৎপাদন বন্ধ হোক

52

দশক চারেক সময়ে দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, বিশেষ করে শহরবাসী মানুষের খাদ্যাভ্যাসে। বাহারি মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পানীয়ের চাহিদা বর্ধমান। পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস স্নায়ু, হৃদযন্ত্র, কিডনি, লিভার, পাকস্থলী ও ফুসফুসের ক্ষতি করছে আশঙ্কাজনক হারে। ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, কিডনি ও লিভারের বিভিন্ন রোগ, উদরপীড়া বাড়ার কারণ এসব খাবার ও পানীয়। আবার এনার্জি ড্রিংকস নামের বিভিন্ন পানীয় যৌনশক্তি লোপ ও মানসিক বিকারগ্রস্ততার কারণ হিসেবে হাজির হয়েছে বলে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে শক্তিবর্ধক পানীয় (এনার্জি ড্রিংকস) নিয়েও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভয়ানক উপদ্রব হিসেবে হাজির হয়েছে। বেশির ভাগই শরীরে নানা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাঁরা এসব পানীয়ের উৎপাদন বা আমদানি এবং বাজারজাতকরণ বন্ধ করার কথা বলছেন। না হলে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। এসব পানীয়তে ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ থাকে। উপাদানটি ভায়াগ্রা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব আছে এমন কেউ ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ পান বা সেবন করলে যখন তখন মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা শক্তিবর্ধক পানীয়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন। এসব উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।
দেশের বাজারে অনেক ধরনের এনার্জি ড্রিংকস পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসবের মধ্যে বিপজ্জনক নানা উপাদান পাওয়া গেছে। অল্প বয়সীদের আকৃষ্ট করার জন্য দৃশ্যমাধ্যমে বাহারি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। বিজ্ঞাপনে যেসব তথ্য প্রচার করা হয়, সেসবের অধিকাংশই সত্য নয়। এসব পানীয়তে মাদক জাতীয় বা যৌন উত্তেজক উপাদান তো রয়েছেই, চিনির পরিমাণও অনিয়ন্ত্রিত। অভিযোগ রয়েছে, কার্বোনেটেড বেভারেজের মোড়কে বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদন ও আমদানির অনুমতি দিচ্ছে রাষ্ট্রের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এনার্জি ড্রিংকসের কোনো জাতীয় মান নির্ধারণ করেনি তারা। এ সুযোগে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসটিআই থেকে কার্বোনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়ে এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি করছে। বিএসটিআই এত দিন দেখেও দেখেনি। এখন তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব ধরনের এনার্জি ড্রিংকসের বাজারজাতকরণ বন্ধ করা হবে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও (বিএফএসএ) শিগগিরই এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদকদের চিঠি দিয়ে উৎপাদন বন্ধ এবং বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব এনার্জি ড্রিংকস আমদানি করা হয়, সেগুলোর আমদানি বন্ধের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হবে।
দেশের সরকারি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের ওপর ভরসা রাখা কঠিন। নিত্য খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল বন্ধের ব্যবস্থাই তারা যেখানে করতে পারে না, সেখানে আমদানীকৃতদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করবে কিভাবে? তাদের মান নিয়ন্ত্রণের সূচক নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। মাত্রা নির্ধারণ করার বা ক্ষতিকর উপাদান পরিহার করানোর ব্যাপারে আগে তাদের দৃঢ়চিত্ত হতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে শক্তিবর্ধক পানীয় নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে এ আশা করি।