কমলগঞ্জে অতিরিক্ত মজুরিতে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটতে ব্যস্ত চোরচক্র

46

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকার গাছচোর চক্র দৈনিক অতিরিক্ত মজুরিতে এখন জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন সামাজিক বনায়নের গাছ কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। গাছচোর চক্রের দিক পরিবর্তনে আর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টহল জোরদার হওয়ায় গত ৯ মাসে মাত্র ১টি আগর গাছ ও ২টি সেগুন গাছ মিলিয়ে মাত্র ৩টি গাছ চুরি হলেও দুটি কাটা গাছ উদ্ধার করা হয়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকা ঘুরে এ বনের বসবাসকারী খাসিয়া সম্প্রদায় ও বনকর্মীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
চির হরিৎ ঘনবন লাউয়াছড়ায় সেগুন, আগর, চাপালিশ, লোহাকাট, গর্জন, গামাইসহ মূল্যবান গাছ গাছালিতে ভরপুর। ফলে এক বছর আগেও সংর্ঘবদ্ধ সশস্ত্র গাছচোর চক্রের থাবার শিকার হত এ বন। আগে এক দিন অন্তর একটি দুটি করে সেগুন, চাপালিশ, গর্জন আগর গাছ কেটে চুরি করে নিত সংঘবদ্ধ সশস্ত্র গাছচোর চক্র। এ চক্রের সদস্যদের খুুঁটির জোর মজবুদ থাকায় ও তারা সব সময় সশস্ত্র থাকতো বলে বনকর্মীরা তাদের কাছে অসহায় ছিল। অনেক সময় বনকর্মীরাও গাছচোরচক্রের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বনকর্মী ও এ বনের বাসিন্দা খাসিয়া পরিবার সদস্যরা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে মাত্র ৩টি গাছ চুরি হয়েছে। গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ পথের ধারের কার পার্কিং এলাকা থেকে একটি সেগুন গাছ কেটেছিল গাছচোরচক্র। তবে রাতের বিজিবির টহল থাকায় বাধ্য হয়ে এ কাটা গাছটি ফেলে যায় চোর চক্র। ১৩ মে গভীর রাতে উদ্যানের ভিতরের আগর বাগান এলাকা থেকে একটি আগর গাছ কাটলেও খাসিয়া পরিবার সদস্যরা বনকর্মীদের সাথে মিলে ধাওয়া করলে চোরচক্র এ আগর গাছটিও ফেলে যায়। তবে ২৭ মে গভীর রাতে উদ্যানের সড়ক ধার থেকে একটি সেগুন গাছ কেটে নিয়েছিল চোরচক্র। এর পর এখন পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে গাছ চুরি হয়নি।
লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ফিলা পত্মী ও খাসিয়া সদস্য সাজু মারছিয়াং জানান, এ বনের সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগ, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি ও খাসিয়া পরিবার সব সময় তৎপর বলে গাছচোর এ বন থেকে গাছ কাটতে পারছে না। তারা আরও জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন সামাজিক বনায়নের বন্দোবস্তকৃত গাছ গাছালি কাটা শুরু হওয়ায় গাছচোরচক্রের সদস্যরা দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে সেখানে গাছ কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। ফলে তারা এখন আর উদ্যানে হানা দিচ্ছে না।
বন্যপ্রাণী সহ-ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রতিনিধিকে বলেন, বর্তমানে বনকর্মী, উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনার পাহারাদার দল ও এ বনের বাসিন্দা খাসিয়া পরিবার খুবই তৎপর। ফলে এ উদ্যানে গাছ চুরি বন্ধ বলা যায়। গত নয়মাসে মাত্র ৩টি ব্যতীত আর গাছ চুরি হয়নি। সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমানও মনে করেন অতিরিক্ত মজুরিতে গাছচোর সদস্যরা সামাজিক বনায়নে কর্মব্যস্ত। তাই তারা একন উদ্যানের গাছ গাছালির দিকে নজর দিচ্ছে না। তাছাড়া গাছ চুরি প্রতিরোধে বন বিভাগ সর্বদা সতর্ক রয়েছে।