সিলেট জেলার নদ-নদী রক্ষার চলমান সংগ্রামে নৌ-মন্ত্রীর সংহতি

182

বিশ্ব নদী দিবসকে সামনে রেখে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও সারী নদী বাঁচাও আন্দোলন যৌথভাবে সিলেট জেলার নদ-নদী রক্ষার চলমান সংগ্রামের সাথে সারী নদীর তীরবর্তী সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে আয়োজন করে সংহতি সমাবেশ। এতে সিলেট জেলার প্রায় ৪০টি নদীর নাম সম্বলিত প্লে-কার্ড প্রদর্শন করা হয়। সংহতি সমানেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খান। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সার্বক্ষনিক সদস্য মো আলাউদ্দিন ও সদস্য শারমিন মোর্শেদ । সারি নদীর তীরবর্তী সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাট বালুর মাঠে আয়োজিত এই সংহতি সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম । স্বাগত বক্তব্য রাখেন সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহ জাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজকে জাফলং-এর পিয়াইন ও ডাউকি নদী পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। অতীতে দেখা প্রকৃতিকন্যা জাফলং-এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। সরকারী দল পরিচয়ে এই সময়ের রাজাকারেরা প্রশাসনের কিছু আল-বদরের যোগসাজশে পিয়াইন ও ডাউকি নদী থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন করে সর্বনাশ করেছে।
তিনি নদী রক্ষায় আওয়ামীলীগ সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের নদ-নদী রক্ষার জন্য আওয়ামীলীগ সবসময় সোচ্চার। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমলে ৬টি ড্রেজার মেশিন সংগ্রহ করে বাংলাদেশের নদ-নদী রক্ষার উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। পরবর্তীকালের কোন সরকার আর এক্টি ড্রেজার মেশিন ক্রয় করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নদ-নদী রক্ষায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত ড্রেজার মেশিন বাড়ীয়ে ১৪টি তে উন্নতি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের পর আরও ৬টি ড্রেজার মেশিন বহরে যুক্ত করেন। বর্তমানে ২০টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদ-নদী সমুহ খনন করা হচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন অচিরেই সিলেটের সকল নদীর নাব্যতা ফিরে আনতে খনন কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ সময় তিনি বলেন বাংলাদেশের নদী পথ ছিল প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার, বর্তমানে তা দখল ও ভরাট হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজারে। তাই বর্তমান সরকার নদী রক্ষায় এবং নদী পথ ফিরিয়ে আনতে আন্তরিক ভাবে কাজ করছে।
শাহজাহান খান দেশের নদ-নদী রক্ষায় পরিবেশকর্মী বিশেষ করে নদী আন্দোলনের কর্মীদের অবদানকে স্বিকার করে নিয়ে বলেন জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের জেলা ও বিভাগীয় কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের যুক্ত করা হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার সিলেট জেলার নদ-নদী রক্ষায় বর্তমান কমিশন দায়িত্বভার গ্রহণের পর দ্বিতীয়বারের মত সিলেট সফরে এসেছে । আমরা পিয়াইন ও ডাউকি নদী পরিদর্শনে গিয়ে যা দেখেছি সেই আলোকে করনীয় নির্ধারন করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য মোঃ আলা উদ্দিন বলেন, সিলেট জেলার যে নদীগুলোর নাম এখানে প্রদর্শিত হয়েছে, সেই নদীগুলো রক্ষা করতে কমিশন কাজ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আন্যতম সদস্য শারমিন মোরশেদ বলেন, সিলেট জেলার নদ-নদীরক্ষার চলমান সংগ্রামের সাথে সর্বাত্মক সংহতি জানাচ্ছি। এই সংগ্রাম থামানো যাবে না। বাসযোগ্য দেশ চাইলে নদী রক্ষা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, পিয়াইন ও ডাউকির বাস্তব চিত্র দেখতে হলে মন্ত্রীকে গোপনে এসে অবস্থা দেখতে হবে। সাড়ম্বরে পরিদর্শন করলে কিছুই দেখতে পাবেন না। সিলেটের নদী বাঁচাতে হলে নদীগুলোকে নদী হিসাবে স্বীকার করতে হবে।
তিনি সিলেট জেলার যে নদীগুলোর নাম এখানে প্রদর্শিত হয়েছে সে সব নদীর মধ্যে বেশকিছু নদীর সরকারী তালিকায় না থাকার অভিযোগ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী বলেন। সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবারকে বিশ্বব্যাপী নদী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। নদী সংগ্রামীরা এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস। সেই দিবস পালন উপলক্ষে সিলেটের নদীকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করবে । এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই সংহতি সমাবেশ।
সংহতি সমাবেশ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজাজামান, নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষনিক সদস্য মোঃ আলা উদ্দিন, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম, জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোঃ ময়নুল জাকির, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ, জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, জৈন্তাপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক শাহ জাহান কবির খান প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি