চা শ্রমিকদের দৈনিক ১০২ টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান

55

চা শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা নির্ধারণ অন্যায্য ও প্রহসনমূলক দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।
শনিবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মালিক পক্ষ ও চা শ্রমিক নেতাদের ঘোষিত এই সর্বনিম্ন মজুরিকে প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকসহ ছাত্র সংগঠনগুলো।
তাদের দাবি, মজুরি নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিম্নতম মজুরি ৩০০ হাজার টাকা ঘোষণা করতে হবে।
বিশ^বিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, ভিক্ষা চাইতে আসিনি, মেহনতি মানুষের শ্রমের মজুরি চাইতে রাস্তায় এসেছি। শ্রমিকের দাবি ন্যূনতম ৩০০ টাকা মেনে নিতে হবে। নইলে আগামী নির্বাচনে শ্রমিকরা আপনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবে।
একই সময় সিলেট সনাকের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ৪২ মাসে মজুরী বেড়েছে মাত্র ১৭ টাকা অথচ ৩০০ টাকা শ্রমিকের মজুরির প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই বছরে সব পণ্যের দাম বেড়েছে অথচ শ্রমিকের মজুরি করা হলো ১০২ টাকা। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিকেরা। ৩০০ টাকার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বিশ^বিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের সভাপতি রাজু কুর্মীর সভাপতিত্বে চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা প্রনব জ্যোতি পাল বলেন, চা শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণের জন্য গঠিত মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের সুপারিশে গত ২০ আগষ্ট চা শ্রমিকদের নিম্নতম ১০২ টাকা ঘোষণা করেছে। অথচ শ্রমিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। শ্রমিক নেতারা মালিকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে প্রহসনমূলক মজুরি ঘোষণা করেছে।
গোয়াইনঘাট ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক চিত্ররঞ্জন রাজবংশী বলেন, ১০২ টাকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে তার মধ্যে বেড়েছে মাত্র ১৭ টাকা। যা প্রমাণ করে মজুরি বোর্ড শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৪১ নম্বর ধারায় উল্লেখিত মানদন্ড কিংবা আইএলও কনভেনশন ১৩১ এর মজুরির মাপকাঠিকে কোনো মূল্য দেয়নি। দর কষাকষির ক্ষেত্রে চা শ্রমিক নেতারা মালিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করেছে।
সমাবেশে বিশ^বিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি দেবাশিষ যাদবের পরিচালনায় কারিতাস সিলেট অঞ্চলের শিক্ষা বিভাগের প্রধান পিউস নানোয়ার বলেন, ‘চা শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে চালের মূল্য যখন ৪৫ টাকা কেজি তখন চা শ্রমিকদের মজুরি মাত্র ১০২ টাকা।’
তিনি বলেন, ভারতে চা শ্রমিকদের দৈনিক বেতন ২৫০ রুপি করা হচ্ছে অথচ বাংলাদেশ চা শ্রমিকদের বেতন ১০২ টাকা এটা মানা যায় না।
সিলেট চা জনগোষ্ঠি ছাত্র-যুব কল্যাণ পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুজিত বাড়াইক বলেন, অবিলম্বে চা শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ৩০০ টাকা করা, স্থায়ী বসত ভিটার বন্দোবস্ত করা, ৫ কেজি চালের সমপরিমান সাপ্তাহিক রেশন চালু করা, চা বাগানগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ, মা ও শিশুর নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, চা বাগান থেকে মাদক নির্মূল করার দাবি জানান।
সমাবেশে শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাসহ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি