উৎসব মুখর পরিবেশে সিলেটের ৬টি আসনে ৬২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল

73
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন (১) সিলেট-৬ আসন থেকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (২) ও সিলেট-১ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দলীয় প্রতীক ধানের শীষ সহকারে নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন (৩)। ছবি- রেজা রুবেল
মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন সিলেট-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা (১) সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী সেলিম উদ্দিন (২) সিলেট-৬ আসনে ২৩ দলীয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২০ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান (৩) সিলেট-৩ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান (৪) সিলেট-৫ আসনে জমিয়ত মনোনীত প্রার্থী শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক (৫)।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে সিলেটের ৬টি নির্বাচনী আসনে ৬২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এরমধ্যে সিলেট-১ আসনে ১১ জন, সিলেট-২ আসনে ৯ জন, সিলেট-৩ আসনে ১৩ জন, সিলেট-৪ আসনে ৭জন, সিলেট-৫ আসনে ১১ জন এবং সিলেট- ৬ আসনে ৯ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়পত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলামের কাছে ৫০টি মনোনয়নপত্র তারা জমা দেন। এছাড়া বাকী ১২ জন বিভিন্ন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সিলেট রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে সিলেট ৬ টি আসনে মোট ৭৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়।
সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, গতকাল বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এক টানা সুষ্ঠভাবে প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।
সিলেট-১: আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, জাপার মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, বাসদের উজ্জল রায়, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রণব জ্যোতি পাল, স্বতন্ত্র আনোয়ার উদ্দিন বোরহানাবাদী, মাওলানা নাসির উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ফয়জুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ, ইসলামী আন্দোলনের রেদওয়ানুল হক। এ আসন থেকে গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেননি বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ ঐক্যফ্রন্টের মো. নুরুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া।
সিলেট-২: জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহহিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. মোশাহিদ খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসেন, গণফোরামের মোকাব্বির খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা কাজী আমিন উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সরদার, মোহাম্মদ আব্দুর রব, মো. হাবিবুর রহমান।
এ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম. ইলিয়াস পত্মী তাহসীনা রুশদীর লুনা, ছেলে আবরাব ইলিয়াস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বিশ্বনাথে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এছাড়া এ আসনে খেলাফত মজলিসের মুনতাছির আলী মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
সিলেট-৩: বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, ব্যারিস্টার মো. আব্দুস সালাম, খেলাফত মজলিসের হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মতিন বাদশা, মাওলানা নজরুল ইসলাম, জাপার উছমান আলী ও মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ, শাহেদ আহমদ, মো. আব্দুল ওদুদ।
এ আসনে মনোনয়ন জমা দেননি কামরুল হুদা জায়গীরদার, খেলাফত মজলিসের দিলওয়ার হোসাইন, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ জাহেদুর রহমান মাছুম, গণফোরামের মোকাব্বির খান।
সিলেট-৪: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আতাউর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান ও এম ইসমাইল আলী আশিক, স্বতন্ত্র মনোজ কুমার সেন। এ আসনে জেলার সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিম চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলনের মো. জিল্লুর রহমান মনোনয়ন জমা দেননি।
সিলেট-৫: আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার, বিএনপির মামুনুর রশিদ মামুন, শরিফ আহমদ লস্কর, জাপার এমএ মতিন চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, স্বতন্ত্র ফয়জুল মুনীর চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা নুরুলআমিন, স্বতন্ত্র আহমদ আল ওয়ালী, বাহার উদ্দিন আল রাজি, মো. শহীদ আহমদ চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের মাসুক উদ্দিন, জাপার সেলিম উদ্দিন, সাবেক জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
সিলেট-৬: আওয়ামী লীগ মনোনীত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিকল্প ধারার শমসের মবিন, চৌধুরী, বিএনপির হেলাল খান হোসেন খান হেলাল, ফয়ছল আহমদ চৌধুরী, জাপার সেলিম উদ্দিন, জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান, স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ আব্দুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ের আসআদউদ্দিন আল মামুন মনোনয়ন জমা দেন।
এ আসনে মনোনয়ন জমা দেননি ইসলামী আন্দোলনের আজমল হোসেন। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে আরো মনোনয়ন জমা পড়লেও সে হিসাব এখনই দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সিলেট রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গত ১৮ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি আসনে মোট ৭৩টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে সিলেট-১ আসনে ১৩ জন, সিলেট-২ আসনে ১৪ জন, সিলেট-৩ আসনে ১৫ জন, সিলেট-৪ আসনে ৯ জন, সিলেট-৫ আসনে ১২ জন এবং সিলেট-৬ আসনে ১০ জন। আগামী ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।
গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে মনোনয়নপত্র সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলামের কাছে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় খন্দকার মুক্তাদিরের সাথে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত চৌধুরী সাদেক, কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ফারুক চৌধুরী, আজির উদ্দিন চেয়ারম্যান, ডা. আশরাফ আলী, সালেহ আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগ যে প্রার্থী দিয়েছেন তিনি অর্থমন্ত্রীর ভাই, আর আমি জনগণের ভাই। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতি সারা দেশের মানুষ বিরাগভাজন। তিনি আরও বলেন, এখনো সময় আছে , যদি নির্বাচন একটু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে আমরা আশা করছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
সিলেট-১ আসনের প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনটি হচ্ছে গণতন্ত্রের মুক্তি ও নির্বাচনের একটি অংশ। তিনি বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে বলে তিনি আশা করেন।
সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী আলহাজ্ব শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিগত দশ বছরের দুঃশাসনের জবাব দিতে হবে। তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আসন্ন নির্বাচন একটি অন্যতম হাতিয়ার। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সকলের সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রয়োজন।
সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী বিএনপির আব্দুল হক (এম এ হক) বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী দল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন ও নিরপেক্ষ থাকার আহবান জানান।
সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী জাতীয় পার্টির উছমান আলী জানান, নির্বাচনে এ আসনে জয়ী হলে সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
জকিগঞ্জ উপজেলা যুব সংহতির সাবেক আহবায়ক জালাল উদ্দিন জানান, বিরোধী দলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন এমপি সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসনে জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। গতকাল বুধবার দলীয় দুটি মনোনয়নপত্র জমাদানের পাশাপাশি কৌশলগত কারণে সিলেট-৬ আসনে স্বতন্ত্রভাবে একটি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ সময় তাঁর সাথে সিলেট-৫ ও ৬ আসনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।