যাত্রী চলাচল সুগম হোক

66

আমাদের দেশে প্রায় সব ধর্মের মানুষ, যারা স্থায়ী ঠিকানা অর্থাৎ পৈতৃক ভিটার বাইরে কর্মরত, মূল ধর্মীয় উৎসবের সময় বাড়িতে ফেরে। অন্যদের বাড়ি ফেরা ততটা চোখে পড়ে না, যতটা চোখে পড়ে মুসলমানদের যাত্রা। সংখ্যাধিক্য ও যাত্রাপথের পরিস্থিতির কারণে এমনটি হয়। মুসলমানরা ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বছরে দুইবার বাড়ি ফেরে। এ যাত্রায় ভোগান্তির শেষ নেই, প্রতিবার একই পরিস্থিতি। এবারও ব্যতিক্রম হবে না, বরং বিড়ম্বনা বাড়বে, বিশেষ করে সড়কপথে। এর পরও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঝুঁকি নিয়ে ঘরমুখো হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।
সড়কপথে ঝুঁকি, ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। অনিরাপদ সড়কের মূল কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালক। সড়কে দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৩ জন প্রাণ হারায়। ঈদের আগে-পরে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ থেকে পাঁচ দিন সড়ক, রেল ও নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে। সবচেয়ে বেশি থাকবে সড়কপথে। কারণ ৮৮ শতাংশ যাত্রীই সড়কযানে চলাচল করে। স্কুল শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার তাগিদ রয়েছে, চালক ও যানের ওপর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কড়া নজর রয়েছে। ফলে এবার বাস সংকট দেখা দেবে। এর অভিঘাত অন্যান্য পথের ওপরও পড়বে।
ঈদ যাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে। মূল কারণ তিনটি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, মহাসড়কে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালানো এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তি-বিড়ম্বনার কারণ। আর অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিবার ঈদের আগে-পরে পাঁচ দিন দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী? সড়কে যে যান সংকট দেখা দিচ্ছে তার সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সড়ক, নৌ ও রেলপথে সমন্বয়ের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করা যেতে পারে। যাত্রীদের ব্যক্তিগত স্বার্থের দিকে নজর কম দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে নজর বেশি দিতে হবে। তারা যেন ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি ও অদক্ষ চালকদের এড়িয়ে চলে। সরকার শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য ছুটির আলাদা ব্যবস্থা করতে পারে। গত ১১ আগস্ট বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে ঈদ যাত্রার যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য সব চালক ও গাড়িকে আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া যেতে পারে।
লক্ষ্য সঠিক হলে, উদ্দেশ্য স্বচ্ছ হলে সমাধানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। প্রণেতা ও পরিচালক নীতিনিষ্ঠ ও আন্তরিক হলে ব্যবস্থাটি সঠিকভাবেই চলমান থাকবে। এবারের ঈদ যাত্রার জন্য নগর-মহানগর, বিশেষ করে ঢাকা থেকে কোন পরিবহনব্যবস্থায় কত যাত্রী পরিবহন করা হয় তার নিরিখে সমন্বিত সূচি তৈরি করা হোক, যাতে সড়কের ওপর চাপ কম পড়ে। এবার রেল ও নৌ মন্ত্রণালয়কে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাত্রাপথকে, বিশেষ করে সড়কপথকে নিরাপদ রাখার জন্য, চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকপক্ষকেও। সড়ককে নিরাপদ রাখায় যাত্রীরাও সহায়তা করতে পারে। তাড়া থাকবে, তার পরও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি ও অবৈধ চালকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।