নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের উপর হামলা, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

100

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অর্নাস পড়ুয়া এক ছাত্রীর জোর পূর্বক ছবি তোলার প্রতিবাদ করায় অধ্যক্ষের উপর ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি হামলা করেছে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা দিপন আহমেদ মুন্না। এ সময় অধ্যক্ষকে বাঁচাতে কলেজের অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান(৩৪) ও ছাত্রী চৈতি আক্তার (১৮) এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালায় হামলাকারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ (৫৭), অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান (৩৪) কে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১২টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অনার্স ভবনের ২য় তলার অফিস কক্ষে এঘটনা ঘটে। এদিকে অধ্যক্ষের উপর হামলার প্রতিবাদে নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে কলেজ ক্যাম্পাস ও উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেছে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গন্ধা গ্রামের জলফু মিয়ার পুত্র হুমায়ুন কবির (১৮) পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে শিক্ষার্থীরা। হামলার ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় মুন্না ও হুমায়ুনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে সে মামলায় হুমায়ুন কবিরকে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। প্রধান হামলাকারী দীপন আহমেদ মুন্না মদনপুর গ্রামের নুরুজ্জামান মিয়ার পুত্র ও বিগত ১০-০৯-২০১৬ সনে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ অনুমোদিত নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে মুন্না।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত (১৬জুলাই) সোমবার দুপুর ২টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মেইন গেইটে একজন অর্নাস ২য় বর্ষে পড়–য়া এক ছাত্রীর ছবি জোরপূর্বক তুলে দিপন আহমেদ মুন্না। তখন সেই ছাত্রী বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদকে অবগত করেন। সে সময় অধ্যক্ষ সঙ্গে সঙ্গে ছবি তোলার ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে অধ্যক্ষের উপর ক্ষিপ্ত হয় মুন্না। এরই জের ধরে মঙ্গলবার সকাল ১২টার দিকে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অনার্স ভবনের ২য় তলার অফিস কক্ষে বসে ছিলেন অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ। এসময় মুন্না ও হুমায়ুন দাঁড়ালো অস্ত্র নিয়ে অধ্যক্ষের উপর হামলা চালায়। সে সময় গোলাম হোসেন আজাদকে ছুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে রক্তাক্ত করে। অধ্যক্ষকে বাঁচাতে অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান ও ছাত্রী চৈতী আক্তার এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালানো হয়। পরে হামলাকারী মুন্না ও হুমায়ুন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে। হুমায়ুনকে আটক করলেও মুন্না মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে আহত অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ (৫৭) অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান (৩৪) ছাত্রী চৈতী আক্তারকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাগর আহমেদ অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ (৫৭) অফিস সহকারী ফয়জুর রহমান(৩৪) এর অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে প্রেরণ করেন। কলেজ ছাত্রী চৈতিকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় ৩ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে রাস্তার উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। পরে খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার এসআই সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃতে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আটককৃত হামলাকারী হুমায়ুনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি কলেজ রোড হয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। এ সময় বক্তরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রধান হামলাকারী মুন্নাকে গ্রেফতারের জন্য আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা তৌহিদ বিন হাসান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউল গণি ওসমানী এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ তোলে নেয়। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকায় ইতিমধ্যে একজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা। মূল হামলাকারীকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের উপর বহিরাগতদের মামলার ঘটনায় হবিগঞ্জ ১(নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী, নবীগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক অলিউর রহমান অলিসহ বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তিব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।