ওসমানী হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর স্বজন ধর্ষণের শিকার ॥ জকিগঞ্জে স্কুলছাত্রী ও হবিগঞ্জে নারী শ্রমিক ধর্ষণ

169

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজন স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোর রাত ৩ টার দিকে হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে গ্রেফতারকৃত পুলিশ মাকামে মাহমুদকে অতিরিক্ত চিফ ম্যাট্রোপালিটন আদালতের বিচারক হোসেইন বিল্লাহ’র আদালতে হাজির করে। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
অভিযুক্ত মাকামে মাহমুদ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা এলাকারা মোখলেছুর রহমানের পুত্র। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেলের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ওসমানীর নাক, কান ও গলা বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক। ভিকটিম নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা যায়। সে তার তার অসুস্থ নানির সঙ্গে রাতে ওসমানী হাসপাতালে ছিলো।
স্কুলছাত্রীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়- অসুস্থ নানীর সঙ্গে হাসপাতালে ছিল ওই শিক্ষার্থী। তৃতীয় তলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন ওই স্কুলছাত্রীর নানী। রবিবার রাতে ওই স্কুলছাত্রী ছাড়া আর কেউ রোগীর সঙ্গে ছিলেন না। রাতে ফাইল দেখার কথা বলে চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ ওই স্কুলছাত্রীকে একই ফ্লোরে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে যান এবং ধর্ষণ করেন। সকালে বাবা-মা হাসপাতালে আসার পর ছাত্রীটি ধর্ষণের ঘটনা তাদের জানায়। সকাল ৮টার দিকে স্কুলছাত্রীর বাবা-মা ওসমানী মেডিকেলের পরিচালকের কাছে চিকিৎসক মাকামে মাহমুদকে বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর পর হাসপাতালের চিকিৎসক, পুলিশ ও স্কুলছাত্রীর স্বজনদের মধ্যে বৈঠক হয়। বেলা দেড়টা নাগাদ বৈঠক চলে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই মাকামে মাহমুদকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এ কে এম মাহবুবুল হক এ ব্যাপারে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ওই স্কুলছাত্রীর স্বজনদের এবং ওই চিকিৎসককে নিয়ে বসি। মেয়ের পক্ষ এবং ওই ইন্টার্নের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। মেয়ের পরিবারের আনা অভিযোগ মাকামে মাহমুদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। পরে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা না হওয়ায় মাকামে মাহমুদকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটিকে ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি হবে। এছাড়া সব ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ফুটেজ সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর পিতা কাজী জসিম উদ্দিন বাদি হয়ে একমাত্র ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম কাউসার দস্তগীর এই তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, কাজী মাকামে মাহমুদকে আটক করা হয়েছে। স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ সন্ধ্যার দিকে আদালতের মাধ্যমে আটক মাহমুদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ওই স্কুলছাত্রীকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করাও হয়েছে।
জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : জকিগঞ্জের হাজারীচক গ্রামের ৩য় শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে হাজারীচক পশ্চিম জামে মসজিদের ইমাম হাসান আহমদ ওরফে আলী হোসেন। সে জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকার হাজারীচক পশ্চিম মহল্লা নতুন পাঞ্জেগানা জামে মসজিদে।
এ সময় মসজিদের ইমাম বারঠাকুরী ইউপির দৌলতপুর গ্রামের কুতুব উদ্দীনের ছেলে হাসান আহমদ (২৫)কে স্থানীয় জনতা আটক করে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী জকিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। ঐ রাতে মেয়েটির বাবা হাজারীচক গ্রামের জুবের আহমদ বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার পুলিশ আটক ইমামকে জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জকিগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক ইমামকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে স্বীকার করেছে, স্কুল ছুটির পর মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায় তার রুমে। পরে শরবতের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর মেয়েটি অচেতন হয়ে গেলে সে একবার ধর্ষণ করে হাত, পা, মুখ বেঁধে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, কলাকুটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী রবিবার স্কুল ছুটির পর থেকে নিখোঁজ ছিলো। এ ঘটনায় এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং আশপাশ এলাকার ডোবা, পুকুর ও সম্ভাব্য স্থানে স্কুল ছাত্রীকে খোঁজতে থাকেন পরিবারের লোকজন। সন্ধ্যা পরে এলাকার লোকজন সন্দেহবশত গ্রামের পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমামের কক্ষে তল্লাশী চালালে ইমামের খাটের নিচে হাত পা ও মুখ বাঁধা অচেতন অবস্থায় স্কুল ছাত্রীকে পান।
এলাকাবাসী আরও জানান, পাষন্ড ইমাম স্কুল ছাত্রীটিকে মসজিদের হুজরায় কক্ষবদ্ধ করে আসর ও মাগরিবের নামাজের ইমামতিও করেছেন।
কলাকুটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আমিনা বেগম এ ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে বলেন, স্কুল ছুটির পর একটি মেয়ে বাড়ীতে যাওয়ার পথে একজন ইমাম হিসেবে মেয়েটির সাথে এমন আচরণ করবেন তা মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনার জন্য ইমামের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে এ শাস্তির ভয়াবহতা দেখে লম্পটরা শিক্ষা নেয় এবং আর কোন মেয়ে এমন ঘটনার শিকার না হয়। স্কুল ছাত্রীটি এখন সুস্থ আছে। তার পরিবারের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী জানান, ইমামের কক্ষ থেকে ছাত্রীটিকে উদ্ধারের পর স্থানীয়দের ধারণা ছিলো ইমাম ছাত্রীটিকে নির্যাতন করেছে। পরে জানা গেছে আসলেই এমনটাই ঘটেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমাদের পক্ষ থেকে ছাত্রীর পরিবারকে যতটুকু সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন আমরা দেব। কথিত এই ইমামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তিনি।
জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হওলাদার জানান, আটক ইমাম জানিয়েছে, স্কুল ছুটির পর মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায় তার রুমে। পরে শরবতের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর মেয়েটি অচেতন হয়ে গেলে সে ধর্ষণ করে। স্কুল ছাত্রীটিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেও জানিয়েছে, মসজিদের ইমাম তাকে ডেকে নিয়ে শরবত খাওয়াইছে। এরপরের ঘটনা তার জানা নেই।
হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : হবিগঞ্জের মাধবপুরে স্থানীয় একটি কটন মিলের এক নারী শ্রমিক গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
রবিবার (১৫ জুলাই) রাত ১১টার দিকে উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া হাওরে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ওই নারীকে উদ্ধার করে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার মীরনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মীরনগর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২২), আবু জাহেরের ছেলে শাহ আলম (৩৬), আঞ্জব আলীর ছেলে নুর রহমান (৩৭) এবং পূর্ব মাধবপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে এমরান মিয়া (২৫)।
এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে অপহরণ ও গণধর্ষণের মামলা করেছেন।
পুলিশ ও মামলার বাদী জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ওই নারী জীবিকার তাগিদে নোয়াপাড়ার একটি কটন মিলে শ্রমিকের কাজ নেয়। মিলে আসা-যাওয়ার পথে পূর্ব মাধবপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে এমরান মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রায়ই ওই নারী শ্রমিকের সঙ্গে এমরানের মোবাইল ফোনে কথা হতো।
একপর্যায়ে ওই নারী শ্রমিকের সঙ্গে এমরানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রোববার রাতে এমরান ফোন করে ওই নারী শ্রমিককে নোয়াপাড়া নিয়ে আসে। নোয়াপাড়া থেকে একটি সিএনজিতে করে তাকে মীরনগর গ্রামে একটি বাড়িতে রাখে। সেখান থেকে কৌশলে এমরান অন্যান্য বন্ধুদের ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে হাড়িয়া হাওরে নিয়ে অপহরণ করে নেয়।
সেখানে সাত যুবক পালাক্রমে ধর্ষণ করে তাকে মাঠে রেখে পালিয়ে যায়। পরে সে কোনো রকমে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উঠলে মাধবপুর থানার টহল পুলিশের এসআই জাঙ্গাঙ্গীর আলমের নজরে পড়ে। তার বক্তব্য শুনে এসআই জাহাঙ্গীর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে জানালে থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে মীরনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে উল্লিখিত চারজনকে গ্রেফতার করে।
খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ওই নারী শ্রমিককে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিকটিমকে চিকিৎসা শেষে সোমবার দুপুরে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভিকটিমকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।