বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত শুরু হচ্ছে এমপিওভুক্তি – প্রধানমন্ত্রী

78

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শিক্ষক কর্মচারীদেরকে দেয়া অঙ্গীকার অনুযায়ী এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধায় আনতে দ্রুত কাজ শুরু হচ্ছে। এক প্রশ্নে বলে জাতীয় সংসদকে এ কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে বিষয়টি নিয়ে তাকে প্রশ্ন রাখেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম।
এমপিও সুবিধার দাবিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন করেছিল শিক্ষক কর্মচারীরা। সে সময় প্রধানমন্ত্রী তার দূত পাঠিয়ে দাবি মেনে নেয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর শিক্ষকরা অবস্থান ছেড়ে এলাকায় ফিরে যান।
কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে আলাদা করে কোনো বরাদ্দ রাখেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি নিয়ে সংশয়ে পড়েন। আর ঈদের আগে আবারও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা।
তবে অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, আলাদা বরাদ্দ না থাকলেও শিক্ষাখাতের বরাদ্দের মধ্যেই এটি অন্তর্ভুক্ত আছে।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের মূল বেতনের পাশাপাশি কিছু ভাতাও দেয় সরকার। এই টাকা না পেলে বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রাম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদেরকে অনেক ক্ষেত্রে বেতনও দিতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধার আওতায় আনতে এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন, শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, শিক্ষকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কাজ চলছে।
‘এই উদ্যোগগুলো নেওয়ার ফলে দেশে সবার জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে।’
প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী একঘণ্টার বেশি সময় ধরে ফখরুল ইমামের প্রশ্নের মৌখিক জবাব দেন। এতে তিনি দেশের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের ৯ বছরের গৃহীত নানা কর্মকাণ্ডসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
আর বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার জন্য এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন স্পিকার।
পরে ফখরুল ইমাম সম্পূরক প্রশ্ন না করে অন্য একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারি দলের অনেকে মনযোগ দিয়ে শোনেননি।
‘প্রধানমন্ত্রী যে বিস্তারিত জবাব দিয়েছেন, তা আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা, পার্টির মহাসচিবসহ সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। কিন্তু ওইদিকের (ট্রেজারি বেঞ্চ) অনেকের চোখে ঘুম ছিল মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুই চোখের মধ্যে সম্পর্ক কী?’
জবাবে স্পিকার বলেন, ‘মাননীয় সদস্য আপনি প্রশ্ন তো করেননি কিছু। এটা তো সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়।’
‘আসলে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিবৃত করেছেন। কাজেই সেই বিষয়ে তার প্রশ্ন থাকার যুক্তি নেই।’
পরে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ‘আমি তো প্রশ্ন খুঁজে পাইনি। কী জবাব দেব?’
এ সময় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে মাইক ছাড়াই দেশের উন্নয়ন ও জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে দেশের উন্নয়নের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই। এজন্য উন্নত করতে ব্যাপক কাজ আমরা করছি। প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। এই নয় বছরের উন্নয়নে বিশ্ব আজ বিস্মিত।’
‘এই উন্নয়নের ধারাটা এত দ্রুত গতিতে হওয়ায় অনেকে আমার কাছে ম্যাজিক কী, তা জানতে চান বিশ্বনেতারা। তবে, এই ম্যাজিকটা কিছুই নয়। দেশকে ভালোবাসি, মানুষের কল্যাণে কাজ করি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সফর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর বহু উন্নত দেশ শরণার্থী আশ্রয় দিতে চায় না। আমরা সেখানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের থাকা, চিকিৎসা, কাজের ব্যবস্থা সব রকমের ব্যবস্থা এত সুশৃঙ্খলভাবে করেছি, এটাও বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়।’
‘আলোচনা করে যাচ্ছি। আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করে তাদের ফেরত দিতে চেষ্টা করছি। সে কারণে সবাই এখানে দেখতে আসছে।’
‘মানুষ একসময় মনেই করত, বাংলাদেশ ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এখন বাংলাদেশ ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না। আর ভবিষ্যতে বেড়াবেও না।’
‘ভবিষ্যতে যেন আর ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে ঘুরতে না হয়, সেই ব্যবস্থাটা করতে কাজ করছি।’