প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

40

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ধারাবাহিকতায় গত শনিবার চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম মতবিনিময় সভার মতো দ্বিতীয় সভায়ও তিনি নীতিনির্ধারণী কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। আজকের দিনের রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনা করে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
দেশে একসময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সম্মানের চোখে দেখা হতো। রাজনীতি পরিচালিত হতো গণমানুষের কল্যাণ চিন্তা করে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করত, তাতে সাধারণ জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হতো। এসব কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু আজকের দিনে সেই অবস্থা আর লক্ষ করা যায় না। এখন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি যেন অনেকটাই চাপিয়ে দেওয়া। দলের পক্ষ থেকে জনস্বার্থের কথা বলা হলেও সেখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখা যায় না। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব বিষয় উল্লেখ করেছেন। আগের দিনে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে আলাদা চোখে দেখা হতো। তার কারণ হচ্ছে, যাঁরা রাজনীতি করতেন তাঁরা সবাই ছিলেন বিশেষ আদর্শের অনুসারী। জনকল্যাণই ছিল তাঁদের ব্রত। কিন্তু আদর্শের রাজনীতি দল ও নেতাকর্মীরা যেন বিস্মৃত হয়েছেন। আজকের দিনে তাই দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলে বিপরীত আদর্শের লোকজনের ভিড়। অনেকেই ক্ষমতার মোহে ক্ষমতাসীন দলে এসে যোগ দেয়। তাতে বড় ধরনের ক্ষতিও হয়। আদর্শের রাজনীতির প্রতি অনুগত নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করা হয়। সাধারণ মানুষের কাছেও রাজনৈতিক দল আস্থা হারায়। বিপরীত মতের লোকজন দলে ভিড়ে দলকে ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণত এ ধরনের এজেন্ডা নিয়েও রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। ক্ষমতাসীন দলের উন্নয়নও তখন সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না। দলের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকে পড়ে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পর পর দুই পর্বে সরকার গঠনের পর দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, তার অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে। সরকার জঙ্গিবাদ দমনে সফল হয়েছে, মাদক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। সরকারের উন্নয়নের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কারণে দল সম্পর্কে জনগণের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। শিকড়ে ফিরতে না পারলে একসময়ের জনসম্পৃক্ত দলও যে জনভিত্তি হারায়, বাংলাদেশে তো বটেই, ভারতীয় উপমহাদেশসহ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তার অনেক উদাহরণ আছে। আর সে কারণেই সাধারণ মানুষের কাছে যেতে বলেছেন শেখ হাসিনা। আমরা আশা করি, তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।