করোনার বিধিনিষেধে বাধাগ্রস্ত সিলেট বিভাগ অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে প্রায় সবকিছু থমকে যায়। ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্প বাস্তবায়ন হার কমে যাওয়ায় মোট দেশজ উৎপাদনও (জিডিপি) কমেছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকলে সরকার চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধ (লকডাউন) দিয়েছে।
দ্বিতীয় দফার লকডাউনে প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালকদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, এবারের লকডাউনে উন্নয়নকাজে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আবার কোনো কোনো প্রকল্প পরিচালক বলছেন, তাদের প্রকল্পের কাজে লকডাউন কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেই প্রভাব কাটিয়ে নতুন করে কাজে গতি ফিরতে শুরু করেছে।
কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে (জেড-৮০৫২) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন।
তিনি ণ্ডবলেন, ‘এখন অফিসে বসে কনসালটেন্ট ও কন্ট্রাক্টর নিয়োগের কাজ চলছে। করোনায় সরকারের দেয়া লকডাউনের কারণে আমাদের কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। আমাদের অফিস পুরোপুরি চলে। আমাদের যা টার্গেট সে অনুযায়ী কাজ চলছে। যথাসময়ে কাজ শেষ হওয়া না হাওয়া বা সামনে কী ঝুঁকি থাকে না থাকে সেগুলো নিয়ে এখনও মন্তব্য করার সময় হয়নি।’
‘সিলেট বিভাগ গ্রামীণ অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ লকডাউনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তফা হাসান।
তিনি ণ্ডবলেন, ‘করোনায় লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। বাংলাদেশেও ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যাঘাতের কোনো শেষ নেই। বিষয়গুলো একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত। তবে এখন আগের তুলনায় আমার প্রকল্পের কাজে গতি বাড়ছে।’
করোনা সংক্রমণ বাড়ছে দেখে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে কোনো কোনো প্রকল্প শেষ করার ঘটনাও ঘটেছে। এমন একটি প্রকল্প ‘শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট’। এর প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আনছার আলী শিকদার ণ্ডবলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বাড়ছিল দেখে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে লোক রেখে প্রকল্পটি শেষ করেছি। ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর আগেই ৩১ মার্চ আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। এখন কিছু পাওনা, বিল আছে; সেগুলোর কাজ করছি। যদি সময় বেড়ে যায়, তাতে সরকারের ক্ষতি হয়। সেজন্য সার্বক্ষণিক প্রকল্প এলাকায় থেকে কাজ শেষ করে ফেলেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চলতি বছর দ্বিতীয় দফায় লকডাউন দিলে আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় সরকার। এ সময় কাজ অব্যাহত রাখার জন্য গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীন সরকারের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)।
১৭ এপ্রিলের ওই বিজ্ঞপ্তিতে সিআরইসি জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও অন্যান্য মেগা প্রকল্পে।
বাংলাদেশ-চীন বিমান চলাচলের দাবি জানিয়ে তাতে আরও বলা হয়েছিল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ একটি যৌথ প্রকল্প। বর্তমানে পুরোদমে চলছে এই প্রকল্পের কাজ। তাই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রায়ই ভ্রমণ করতে হচ্ছে। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩০ জন ব্যক্তিকে প্রতি সপ্তাহে চীন ও বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতে হয়। যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রকল্প পরিচালক, সুরক্ষা ও মান যাচাই এবং কারিগরি নির্মাণ কর্মকর্তাদের মতো মুখ্য পদে থাকা ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশে অতিমারি পরিস্থিতি অবনতির ফলে বিমান চলাচল স্থগিত করার কারণে চট্টগ্রামে প্রকল্পের জন্য অর্ডারকৃত ইস্পাত বিম, ইস্পাত বার ও ভূ-প্রযুক্তিগত সামগ্রী বহনকারী নৌযানের জট দেখা দিয়েছে। এছাড়া উচ্চ পোর্ট ডেমারেজ ফি, অতিরিক্ত পোর্ট স্টোরেজ চার্জ ও জ্বালানি চার্জ প্রকল্পটির মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি করেছে। ইস্পাত বিম, রেল এবং আরও জিনিসপত্র আসতে বিলম্বিত হয়েছে, যা প্রকল্পের সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল বলেও জানিয়েছিল সিআরইসি।
সিআরইসির দাবি অনুযায়ী, লকডাউন ও বিমান চলাচল বন্ধে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজে যে ব্যাঘাত ঘটেছিল, তা স্বাভাবিক হয়েছে কি-না? এর জবাবে শনিবার (২২ মে) পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) প্রকৌশল গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী ণ্ডবলেন, ‘হ্যাঁ, স্বাভাবিক হয়েছে।’
অবশ্য কী কী জটিলতা ছিল এবং তা কীভাবে সমাধান হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জটিলতা আমরা পাইনি। ওরা বলেছিল আসলে ফ্লাইট চালু করে দেয়ার জন্য। আমাদের কাজ স্বাভাবিক গতিতেই চলছে।’
দ্বিতীয় লকডাউন শুরুর দিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ণ্ডবলেছিলেন, ‘২০২০ সালে দেশে করোনা যখন প্রথম আঘাত হেনেছিল, তখন অনেক বিদেশি শ্রমিক চলে গিয়েছিল। বিদেশি কিছু বিশেষজ্ঞ দেশে গিয়ে অনেকে ফিরে আসেননি। তখন উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। একদম বন্ধ হয়নি কিছুই। গতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ ভাগে নেমে গিয়েছিল। এখন তো পিকআপ (বৃদ্ধি) করছিলাম আমরা। এখন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় আবার কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এখনো আগের পর্যায়ে বাধা আসেনি। এখনো মোটামুটি স্পিড আছে। আমরা এটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করবো। কিন্তু কাজ কোথাও বন্ধ হবে না। তবে নতুন প্রকল্প যেগুলো পাস হয়েছে মাত্র, তাদের মাঠে নামতে আগের তুলনায় একটু দেরি হতে পারে।’