আজ মায়ের ভাষার দিন

73

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সইমু না আর সইমু না অন্য কথা কইমু না/যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান/এই জানের বদলে রাখুম রে/বাপ-দাদার জবানের মান…। কী আশ্চর্য বোধ। ভাষা চেতনা। সেই বাহান্ন সালে। ভাবা যায়! বাঙালী বুকের রক্ত ঢালেনি শুধু, গৌরবের ইতিহাস রচনা করেছিল।
কোথায় বরকত কোথায় সালাম/ সারা বাংলা কাঁদিয়া মরে/ যে রক্তের বানে ইতিাস হলো লাল/ যে মৃত্যুর গানে জীবন জাগে বিশাল/ সে জাগে ঘরে ঘরে…। বাংলার প্রতি ঘরে বোনা হয়েছিল একুশের রক্তবীজ। বায়ান্নর সে বীজ থেকে আজকের বাংলাদেশ।
আজ বুধবার মহান সেই অর্জনের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করার দিন। মাথা নত না করার অমর একুশে আজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে বিরল ইতিহাস গড়েছিল বাঙালী। প্রতিবারের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হবে মহান শহীদ দিবস। সর্বত্র সকলের কণ্ঠে আজ একই শোকসঙ্গীতÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…। একইসঙ্গে বাঙালীর ভাষা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গোটা বিশ্ব পালন করবে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে।
তোমার কোলে তোমার বোলে কতই শান্তি ভালবাসা…। মায়ের মুখের সেই বুলি আর ভালবাসা আক্রান্ত যখন, তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল বাঙালী। ১৯৫২ সালের এই দিনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে এসেছিল বাংলা মায়ের বিক্ষুব্ধ সন্তানেরা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মুখর ছাত্রদের রুখে দিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছিল পুলিশ। বরকত সালাম রফিক শফিক জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেক শহীদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা। সেই থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস। এর ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। আজ সারা পৃথিবীর মানুষের স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাঙালীর ভাষা সংগ্রাম।
ভাষার অধিকারের পক্ষে লড়ার পাশাপাশি, ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন শোষণের বিরুদ্ধে একুশ ছিল বাঙালীর প্রথম প্রতিরোধ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতিসত্তার যে স্ফূরণ ঘটেছিল তা-ই পরবর্তীতে বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মনস্তাত্মিক/// ও সাংস্কৃতিক প্রেরণা জোগায়। নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানোর বিশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে আসে ২১ ফেব্রুয়ারি।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
শুধু শোক নয়। সহ্য করে যাওয়া নয়। সব অন্যায় অশুভ অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানে সারাদেশে পালিত হবে অমর একুশে। সমাজের সব অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথ নেবে বাঙালী। গীতিকবির ভাষায়Ñ স্বাধীন এই বাংলা আমার/ কোটি প্রাণ শহীদ মিনার/ নেবই নেব, নেবই নেব/ নেবই নেব আমরা মনের মতো এই দেশ গড়ে…।
একুশের প্রথম প্রহর থেকে শুরু হয়ে যায় নানা আনুষ্ঠানিকতা। প্রয়াতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদও ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এর পর পরই সর্বস্তরের জনতার ঢল নামবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ফুল দিয়ে ভাষার প্রতি নিজেদের ভালবাসার কথা জানাবেন। নগ্ন পায়ে অংশ নেবে প্রভাত ফেরিতে। আজ শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হবে শোকের কালো পতাকা।