সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে এরশাদ ॥ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টি নির্বাচন চায় না

69

স্টাফ রিপোর্টার :
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সংবিধানের আলোকেই জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে বিফ্রিংকালে একথা জানান তিনি। এরশাদ বলেন, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। নির্বাচন ছাড়া কোন কিছুই করা যায় না। আগামীকাল থেকে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে জানিয়ে এরশাদ বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী সিলেটে থেকে হযরত শাহজালালের দোয়া নিয়েই নির্বাচনী প্রচারনা শুরু হলো জাতীয় পার্টির। আশা করছি দোয়া কবুল হবে এবং আগামী নির্বাচনে আমরা ভাল করব।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, বর্তমান সংবিধানে যে পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের কথা বলা আছে, জাতীয় পার্টি সেই পদ্ধতির সরকারের অধিনেই নির্বাচনে অংশ নিবে। এজন্য বিকল্প কোন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো আমাদের প্রতি সুবিচার করেনি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব কি-না, বা কয়টি আসনে প্রার্থী দিবো, সেটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর।
এ সময় সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আমরা ৯০ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম। আশা করেছিলাম নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিবো। কারণ প্রতিবাদ জানানোর ভাষাই হচ্ছে নির্বাচন। কিন্তু আমাকে বন্দী করে রাখা হলো। আমার পরিবারের সদস্যদেরও বন্দী করা হলো। কারাগারে থেকেই আমি নির্বাচন করেছি। তখন সিলেটবাসী আমার এবং জাতীয় পার্টির প্রতি যে ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সিলেটবাসী তখন আমাকে ৮টি আসন উপহার দিয়েছিলেন। এবারও আমি সিলেটবাসীর কাছে ছুটে এসেছি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩ টার দিকে সিলেটে শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা পৌনে ২টায় হেলিকপ্টার যোগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান এরশাদ। সেখান থেকে সরাসরি শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দরগাহ এলাকায় রওয়ানা হন। সোয়া দুইটায় তিনি মাজারে এসে প্রবেশ করেন। সেখানে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ করেন তিনি। মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করেন।
মাজার জিয়ারতকালে তার সঙ্গে ছিলেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি.এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ মো. সেলিম উদ্দিন এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি ও সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ওসমান আলী চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এদিকে মাজার জিয়ারতের পর সিলেট সার্কিট হাউজে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এরশাদকে স্বাগত জানাতে এসে দুই পক্ষের উত্তেজনা: গতকাল বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে সিলেট সার্কিট হাউসে জাতীয় পার্টির দু’টি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দু’টি পক্ষই মারমুখি অবস্থানে চলে গেলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুপুরে খাবারের জন্য চলে আসেন সিলেট সার্কিট হাউসে। তিনি সার্কিট হাউসে আসার আগেই সেখানে প্রধান রাস্তায় অবস্থান নেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান আতিক ও এটিইউ তাজ রহমান পক্ষের অনুসারীরা। তবে তখন আতিক ও তাজ কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তারা এরশাদের সাথে ছিলেন। এছাড়া কীন ব্রিজেও আরোও সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। তারা এরশাদকে স্বাগত জানিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে আতিকুর রহমান আতিকের পক্ষের লোকজন সিলেট-৩ আসনে আতিককে দেখতে চান এমন শ্লোগান দিতে থাকেন। এতে বাধা দেন এটিইউ তাজ রহমান গ্র“পের লোকজন। বাধা দিতে গিয়েই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পাল্টাপাল্টি শ্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ এসে দু’টি পক্ষকে সার্কিট হাউসের প্রধান ফটক থেকে সরিয়ে দেয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন বলেন, ‘দু’টি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। তাই আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে দু’টি পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দিয়েছি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এরশাদের গাড়িবহর এসে সার্কিট হাউসে প্রবেশ করে। তখন আবার জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা প্রধান ফটকে এসে জড়ো হন।