বিয়ানীবাজারে ৬ মাসে ৬ হত্যা

30

বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিয়ানীবাজার উপজেলায় ছয় মাসে ৬ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং রহস্য উদঘাটনে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। গত দু’দিনে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী পৃথক স্থানে অন্তত: ১০টি অভিযান পরিচালনা করেছে।
গত শনিবার বিয়ানীবাজার পৌরশহরে সর্বশেষ প্রকাশ্য দিনদুপুরে খুন হন আনোয়ার হোসেন (২৪) নামের এক যুবক। ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ছুরিকাঘাত করে তাকে খুন করা হয়েছে বলে তার স্বজনদের অভিযোগ। তিনি সুপাতলা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ যাকে শনাক্ত করেছে তার পরিবারের দুই সদস্য আজাদ উদ্দিন (৪৪) ও পাভেল আহমদ (২০) নামের দু’জনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। সন্দেহভাজন প্রধান আসামী সায়েল আহমদ (২৩) ও তার পিতা পংকি মিয়া (৪৩) কে গ্রেফতারে গোলাপগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আনোয়ার খুনে ব্যবহৃত ছুরিও এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক।
এর আগে ১৭ জুলাই বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের শ্রেণী কক্ষে ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু (২৪)’র গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতকারকৃতদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা কামরান হোসেন ও এমদাদুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অপর আসামী ফাহাদ আহমদ এবং দেলওয়ার হোসেন এখনো কারাগারে। এ হত্যাকান্ডের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে একনলা বন্ধুকের গুলিতে লিটুর মৃত্যু হয় বলে উেেল্লখ করা হয়েছে। তবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মামলার ৭ আসামীর মধ্যে অপর ৩ আসামী পলাতক।
গত ২৬ জুন চারখাই ইউনিয়নে ফরহাদ আহমদ (২২) এর এক যুবকের লাশ স্থানীয় একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার করা হয়। তাকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে খুন করা হয়েছে বলে মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী জানান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সব আসামী পলাতক। নিহত ফরহাদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তিনিও পেশায় অটোরিক্সা চালক ছিলেন।
গত ১২ জুন মোল্লাপুর ইউনিয়নের পাতন গ্রামে মসজিদ এলাকার ভিতরে সৃষ্ট সংঘর্ষে খুন হন দিনমজুর মহিদুর রহমান মিন্টু (৪৮)। এটিও একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে তদন্ত সূত্রের দাবী। পূর্ব থেকে মারামারির জন্য মসজিদ এলাকায় অস্ত্র জড়ো করে রাখা হয় বলে পুলিশ জানায়। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ মোট ৫জনকে গ্রেফতার করে। তবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের কালাইউরায় ২৩ জুন রাতে ইউপি সদস্য মুমিনুল ইসলাম রহমানের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা রেশম বেগম (৪৫) কে হত্যা করা হয়। বড় ধরনের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। এ মামলায় দুই আসামীর একজন মুমিনুল ইসলাম রুমন কারাগারে আছেন। অপর আসামী তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পলাতক।
এছাড়াও গত মাসে শেওলা ইউনিয়নের শালেস্বর থেকে ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর (৬০) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রহস্য উদঘাটনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম নিহত ব্যক্তির মোবাইল ফোনের ‘কললিষ্ট’ সংগ্রহের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু ওই তালিকাটি দীর্ঘদিনেও পুলিশের কাছে না আসায় রহস্য আরো ঘনিভূত হচ্ছে।
গত ২৬ জুন চারখাই ইউনিয়নে ফরহাদ আহমদ (২২) এর এক যুবকের লাশ স্থানীয় একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার করা হয়। তাকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে খুন করা হয়েছে বলে মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী জানান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সব আসামী পলাতক। নিহত ফরহাদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তিনিও পেশায় অটোরিক্সা চালক ছিলেন।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: জাহিদুল হক বলেন, ‘বেশীরভাগ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত। আমরা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছি। আসামীদের গ্রেফতারে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করছি। অচিরেই সকল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।’
এদিকে পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে প্রত্যন্ত স্থানে আত্মগোপনে থাকা আসামীদের গ্রেফতারে সমন্বিত অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল মুন্সী বলেন, ‘হত্যাকান্ডে জড়িত কোন আসামীকে ছাড় দেয়া হবেনা। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।